রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদেরকে মুক্ত করতে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে তারা কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে কিছুটা সরে গেলে দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর উপাচার মুক্ত হন।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে এই অভিযান শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উদ্ধার অভিযানে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা যৌথভাবে অংশ নেন। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
আন্দোলনকারীরা প্রশাসন ভবনের পেছনে ও বঙ্গবন্ধু হলের দিকে অবস্থান নিয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। তবে তারা বেশিক্ষণ অবস্থান নিতে না পেরে সরে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই উপাচার্যকে প্রশাসন ভবন থেকে বের করে নিয়ে আসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
মুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আমরা অনেক ধৈর্য্য ধরে তাদের সঙ্গে তিনবার বসেছি। তাদের কথা শুনেছি।
‘তারা আমাদের কথা শুরুতে শুনেছিল। এর কিছুক্ষণ পর তারা আমাদের জানালো, বিষয়টি আর আমাদের হাতে নেই, বহিরাগতরা প্রবেশ করেছে। আমার শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে এখানে ছিল না। সবশেষে বহিরাগতরা এখানে রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলা করতে এসেছিল।’
অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উপাচার্যকে মুক্ত করতে বুধবার রাতে রাবি ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্য অভিযান চালান। ছবি: নিউজবাংলা
উপাচার্য বলেন, ‘হলে যারা থাকবে বা চলে যাবে আজকের জন্য তাদের সব দায়িত্ব আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে অনুপ্রবেশকারীরা প্রবেশ করে আমাদের পানি ও বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ করে দিল। ফলে আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর আমরা পুলিশ প্রশাসনকে কল করেছি। তারা আমাদের উদ্ধার করেছে। আজকে যারা হলে থাকবে, তাদের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব। ক্যাম্পাসের পুরো দায়িত্ব এখন প্রশাসনের হাতে, আমরা তাদের নির্দেশে চলব।’
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নির্দেশনা দেয়ার পর আমরা ক্যাম্পাসে এসে সন্ধ্যা ৭টা থেকে আধ ঘণ্টাব্যাপী উদ্ধার অভিযান চালিয়েছি। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতে প্রশাসন সহযোগিতা চাইলে আমরা সাহায্য করব।’
এর আগে বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে রাবি কর্তৃপক্ষ। এরপর শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে হবিবুর রহমান মাঠ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। আন্দোলনকারীরা পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লিখিতভাবে পাঁচ দফা দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা দীর্ঘ আলোচনা শেষে বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানান।
প্রশাসনের সিদ্ধান্তে দাবি পূরণ না হওয়ায় এ সময় উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন। একপর্যায়ে প্রশাসন ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জন্য নেয়া খাবারও ছিনিয়ে নেয় আন্দোলনকারীরা। পরে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে শিক্ষার্থীদের দশজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনকারীরা প্রশাসন ভবনের ফটক তালা দিয়ে ঘেরাও করে রাখেন। এতে উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ভেতরে আটকা পড়েন। এ সময় আন্দোলনকারীরা প্রশাসন ভবনের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।