চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। মঙ্গলবার নগরীর ষোলশহর থেকে মুরাদপুর এলাকার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেছেন, নিহতদের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনজনের মরদেহ গেছে। তাদের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী, অন্যজন পথচারী। দুজনের মরদেহ মুরাদপুর ও ষোলশহর এলাকা থেকে আনা হয়েছে। নিহত পথচারীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নিহত দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়।
আকরাম চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দপ্তর সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ইদ্রিস আলী।
নিহত পথচারীর নাম ফারুক। ৩২ বছর বয়সী এই যুবক রড-আয়রনের মিস্ত্রি বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
নিহত তৃতীয় জন ফয়সাল আহমদ শান্ত (২০) ওমরগণি এমইএস কলেজের ছাত্র বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে এই তিনজনের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বুলেট ইনজুরিতে। আরেকজনের শরীরে ফিজিক্যাল অ্যাসল্টের চিহ্ন রয়েছে।’
সংঘর্ষের মধ্যে অন্তত ৪০ জনকে আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে জানান মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আলাউদ্দিন তালুকদার।
বন্দর নগরীতে দ্বিতীয় দিনের মতো মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুরো ষোলশহর ২ নম্বর গেট থেকে মুরাপুর পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে।
এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিকেল ৩টা থেকে ষোলশহর স্টেশনে জড়ো হওয়া শুরু করেন। এরপ সেখান থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন।
অপরদিকে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি অংশ মিছিল নিয়ে দুই নম্বর গেট থেকে মুরাদপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
বিকেল ৪টার দিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরই মধ্যে থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। কারও কারও হাতে অস্ত্রও দেখা যায়।
তবে ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান চোখে পড়েনি। নগরীর কেজিডিসিএল কার্যালয়ের সামনে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করে থাকেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা মুরাদপুর হয়ে অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে ষোলশহর এলাকায় যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান। এরপর তারা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা হামলা চালান।
এ সময় তাদের দুজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।