জাতীয় সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে কোটা ব্যবস্থা যৌক্তিক সংস্কারের জন্য দৃশ্যমান পদক্ষেপ চেয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আগামী ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে তারা বলেছেন, এই সময়সীমার মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হলে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
একই সময়ের মাঝে শাহবাগ থানায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়েছে।
রোববার গণপদযাত্রা নিয়ে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদানের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘স্মারকলিপিতে আমাদের দাবি তুলে ধরে এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আমরা ২৪ ঘণ্টার একটি সুপারিশ করেছি। আমরা চাই, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদের অধিবেশন ডেকে আইন পাসে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক অথবা অন্তত অধিবেশন ডাকা হোক। অর্থাৎ আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করব। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বা দায়িত্বশীল পক্ষ থেকে কী বক্তব্য বা পদক্ষেপ আসছে সেটা পর্যবেক্ষণ করে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
নাহিদ বলেন, ‘শাহবাগ থানায় আমাদের নামে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আমরা গতকাল (শনিবার) বলেছিলাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেটি প্রত্যাহার করতে হবে। আজ আমরা সেই সময় আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে দিচ্ছি। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি মামলা প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে আমাদের কর্মসূচি কঠোর থেকে কঠোরতর হবে।’
আন্দোলনের এই অন্যতম সমন্বয়ক বলেন, ‘১ জুলাই থেকে অবরোধ আর অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি বিক্ষোভ আর স্মারকলিপি দেয়ার মতো কর্মসূচি নিয়েছি। কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না।
‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আমরা নাকি বার বার দাবি পরিবর্তন করছি। কিন্তু আমাদের দাবি শুরু থেকেই স্পষ্ট। আমরা প্রথম দিন থেকেই বলেছি, কোটা সংস্কারের এখতিয়ার সরকার এবং নির্বাহী বিভাগের। বরং সরকার দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে। তাই আমরা চেয়েছি আইন বিভাগ বা জাতীয় সংসদের মাধ্যমে আইন পাস করা হোক যাতে জনপ্রতিনিধিরা যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি বা বক্তব্য কখনও স্ববিরোধী নয়। দাবি উপস্থাপনের যত দরজা আছে সব দরজায় যাচ্ছি। কিন্তু আমাদেরকে ফেরানো হচ্ছে। আর বলা হচ্ছে আমাদের দাবি স্ববিরোধী। সরকার যদি প্রথম দিনেই আমাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করত তাহলে আমাদেরকে এত জায়গায় যাওয়ার দরকার পড়ত না।’
এর আগে রোববার বেলা আড়াইটায় শিক্ষার্থীদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এক দফা দাবির স্মারকলিপি দিতে বঙ্গভবনে যান। তবে তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। পরে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের কাছে তারা স্মারকলিপি জমা দেন।
এ বিষয়ে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে ওনার সামরিক সচিব আমাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, অতি দ্রুত তিনি এই স্মারকলিপি রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে দেন।
‘সেখানে আমরা স্পষ্ট করে আমাদের এক দফা দাবি উল্লেখ করেছি। আমাদের প্রত্যাশা, অতিসত্বর আমাদের দাবি বাস্তবায়নে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে গণপদযাত্রা করে শিক্ষার্থীরা এর আগে তিন দফায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে পৌঁছেন। দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে বঙ্গভবন অভিমুখে তাদের পূর্বঘোষিত গণপদযাত্রা শুরু হয়।
এরপর শিক্ষার্থীরা টিএসসি, শাহবাগ, মৎস্য ভবন মোড় হয়ে শিক্ষা ভবন মোড়ে এলে প্রথম দফায় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। তবে সেখানে কোনো ব্যারিকেড ছিল না। পুলিশ মানব ব্যারিকেড তৈরি করলে সেটি ভেঙে জিপিও মোড়ের দিকে এগিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।
জিপিও মোড়ে পুলিশ দ্বিতীয় দফায় শিক্ষার্থীদের আটকে দেয়। তাদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের সমন্বয়কদের অনুরোধ করা হয় আর সামনে না যাওয়ার জন্য। তাদের ১২ জন প্রতিনিধি প্রেরণের প্রস্তাব করে পুলিশ।
এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে বঙ্গভবনে শিক্ষার্থীদের ১২ জন প্রতিনিধি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন এবং বাকি শিক্ষার্থীরা জিপিও মোড়ে বসে পড়েন।
এদিকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট জিপিও মোড়ে অবস্থানের পর সেই মোড়ের ব্যারিকেডও ভেঙে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দিকে এগিয়ে যান। তবে পুলিশ ও যানজটের কারণে শিক্ষার্থীরা কয়েক ভাগ হয়ে যান।
কিছু শিক্ষার্থী গুলিস্তান মোড়ে চলে যান। আর কিছু শিক্ষার্থী মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে যান। মাঝখানে পড়ে যায় কিছু বাস। পরে স্টেডিয়ামের সামনের শিক্ষার্থীরা পাশের রাস্তা দিয়ে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে এলে বাকি শিক্ষার্থীরা সেখানে থাকা পুলিশের মানব ব্যারিকেড ভেঙে ১০ থেকে ১২ ফুট এগুলে ফের ব্যারিকেডের মুখে পড়েন। পরে সেখানেই অবস্থান নেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত সাত কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ফলে পদযাত্রায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।