বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোটা আন্দোলনকারীদের বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা কাল

  • প্রতিনিধি, ঢাবি   
  • ১৩ জুলাই, ২০২৪ ২০:০৮

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘লজিক্যাল অ্যান্ড কনস্ট্রাক্টিভ সলিউশনের জন্য যতগুলো পথ প্রয়োজন আমরা ছাত্ররা সেই পথগুলো অবলম্বন করব। যারা আমাদেরকে ব্লেইম ও ট্যাগ দিতে চান তাদের উদ্দেশে বলব- আপনারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পালস বুঝুন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাতারে আসুন।’

জাতীয় সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে কোটা ব্যবস্থা যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আগামীকাল রোববার গণভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা করবেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি চলছে। তার পাশাপাশি গণপদযাত্রার এই কর্মসূচি আগামীকাল রোববার বেলা ১১টায় এই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হবে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত সাত কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন।

‘সারা দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ জেলা প্রশাসক কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করবেন। সেখানে তারা একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন।’

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘লজিক্যাল অ্যান্ড কনস্ট্রাক্টিভ সলিউশনের জন্য যতগুলো পথ প্রয়োজন আমরা ছাত্ররা সেই পথগুলো অবলম্বন করব। যারা আমাদেরকে ব্লেইম ও ট্যাগ দিতে চান তাদের উদ্দেশে বলব- আপনারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পালস বুঝুন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাতারে আসুন। আমরা চাই, আমাদের দাবির সঙ্গে আপনারা একাত্মতা পোষণ করে সাপ্রেশনের পরিবর্তে সলিউশনের পথ বেছে নেবেন।’

আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘সরকারের সব গ্রেডের চাকরিতে আমরা মোট পাঁচ শতাংশ কোটাকে যৌক্তিক মনে করছি। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কোন কোন কোটা। সেই জায়গায় আমরা তিনটি কোটার কথা বলেছি। সেগুলো হলো- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা। কোনো পোষ্য কোটা আমরা চাই না। সুতরাং আমরা আবারও স্পষ্ট করছি, আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধী নই।

‘পুলিশের বক্তব্য সাংঘর্ষিক’

আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আজ শাহবাগ থানায় অজ্ঞাতনামা বলে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীরা নাকি তাদের সাঁজোয়া যানের ক্ষতি করেছে। অথচ ওইদিন সন্ধ্যায় রমনা জোনের ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেছিলেন, এখানে আমাদের সাঁজোয়া যান ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন এসেছিল তারা অনেকেই এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে- এই ধরনেরই একটি ঘটনা। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।’

এরপর আসিফ মাহমুদ সেই স্টেটমেন্টের অডিও সবাইকে শোনান।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার দাবি

মামলার বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় আসামি হিসেবে রাখা হয়েছে অজ্ঞাত আমাদের। এখানে অজ্ঞাতনামা দেয়ার প্রয়োজন নেই। এখানে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেটি খুব স্পষ্ট।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে। যদি মামলা দিতেই হয় তাহলে যেন আমাদের নামেই মামলা দেয়া হয়। ছাত্রসমাজকে এ ধরনের মামলা দিয়ে ভয় দেখানো যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। আর সেদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বিভিন্ন ব্লকেড কর্মসূচিতে হামলার সঙ্গে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

‘আন্দোলন দমনের চেষ্টা হলে বুমেরাং হবে’

নাহিদ বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। সরকারের উচিত ছিল প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পরিস্থিতি তৈরি করা এবং দৃশ্যমান পদক্ষেপের মাধ্যমে এই কোটা সমস্যার সংকট নিরসন করা।

‘কিন্তু সরকার সেটি না করে এখন আন্দোলনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন এবং নানা শক্তির মাধ্যমে এই আন্দোলনকে দমনের একটি পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। কিন্তু এ ধরনের পরিকল্পনা সরকারের জন্যই বুমেরাং হবে। তারপরও যদি সরকার এ ধরনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’

‘সরকার দায় এড়াতে আদালতকে ব্যবহার করছে’

নাহিদ ইমলাম বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমাদের আন্দোলনকে বিচারিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমরা কেন আদালতে যাচ্ছি না। এটি কিন্তু আমরা অনেকবার স্পষ্ট করেছি। সেটি হলো, আদালতে এখন যে বিষয়টি বিচারাধীন তা হলো নির্বাহী বিভাগের জারি করা ২০১৮ সালের পরিপত্র।

‘কিন্তু সেই পরিপত্রের প্রেক্ষাপটে আমাদের আন্দোলনটি আর সেখানে নেই, আমাদের আন্দোলনটি সামগ্রিক কোটা ব্যবস্থা নিয়ে। সেখানে প্রথম, দ্বিতীয় শ্রেণীসহ তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির কোটাও অন্তর্ভুক্ত। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার বার বার দায় এড়ানোর জন্য আদালতকে ব্যবহার করছে। আদালতকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কালক্ষেপণের নাটক করছে। ১৮ সালের পরিপত্র নিয়ে কথা বলা আমাদের জন্য সাব-জুডিস হবে। কিন্তু সামগ্রিক কোটা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলা কখনোই সাব-জুডিস হবে না।’

‘ছাত্রলীগ আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে’

আদালতের রায়ের পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে ছাত্রলীগের যে দাবি সে বিষয়ে নাহিদ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের জোয়ার কমেনি বরং প্রতিদিনই বাড়ছে। আমাদের কোনো দাবিই তো পূরণ করা হয়নি, সেখানে কী কারণে শিক্ষার্থীরা ফিরে যাবে? শিক্ষার্থীরা এত বোকা নয় যে তাদের সামনে একটি মুলা ঝুলানো হবে এবং তারা ঘরে ফিরে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের শুরুর দিকে এই ছাত্রলীগের কোন খোঁজখবর ছিল না। এখন যখন আন্দোলন সফলতার দিকে যাচ্ছে, তখন তারা এই আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছে।’

‘শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরলেও আমরা ফিরব না’

আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের নিয়ে বলতে চাই, আপনারা যখন আপনাদের পেনশন স্কিমকে সামনে রেখে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তখন কিন্তু ছাত্ররা জোর করে ক্লাসে গিয়ে বসে থাকেনি। এখন সময় এসেছে আপনাদের প্রমাণ করার যে, যারা আপনাদের যৌক্তিক দাবিতে আপনাদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে, তাদের যৌক্তিক দাবিতে আপনারা কতটুকু তাদের পাশে থাকবেন।

‘আপনাদের দাবি যদি পূরণ হয়েও যায় তারপরও আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।’

এ বিভাগের আরো খবর