সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আগামীকাল বুধবার সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে এই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ হাসান এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমাদের এই কর্মসূচি চলবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি শুরু হবে। সড়ক এবং রেলপথ আমাদের এই কর্মসূচির আওতাভুক্ত থাকবে।’
নাহিদ বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আন্দোলন শুরু হলেও আমরা এখন চূড়ান্ত ফয়সালা চাচ্ছি। কারণ আগামীকালের (বুধবার) রায়ে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র ফিরে এলেও এটি আবার বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
‘আমরা এমন একটি সমাধান চাচ্ছি যাতে কোটা নিয়ে বাংলাদেশে আর কখনও কোনো সংকট তৈরি না হয়। সেজন্য আমরা সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় রেখে কোটা বৈষম্য নিরসনের কথা বলছি।’
কোটাবিরোধী আন্দোলনের এই অন্যতম সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। তাই আদালত কী রায় দিলো সেটির সঙ্গে আমাদের আন্দোলনের আর কোনো সম্পর্ক নেই।’
আদালতে আবেদন করা দুই শিক্ষার্থী কারা জানতে চাইলে আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আদালতে দুই শিক্ষার্থীর করা আবেদনের সঙ্গে আমাদের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা এটি করেছে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, তারা সংক্ষুব্ধ হয়ে এটি করেছে। তবে আমরা তাদের এই আবেদনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি।’
কোটা নিয়ে আগামীকাল বুধবার আপিল বিভাগের শুনানিতে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত এলে কী হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘১৮-এর পরিপত্রটি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির। আর আমাদের এক দফা দাবি, সব শ্রেণির অর্থাৎ প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির। সুতরাং ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র কালকে যদি বহালও রাখা হয় তাহলেও কিন্তু আমাদের দাবি পূরণ হচ্ছে না।
‘তাই শুধু হাইকোর্টের রায় দিয়ে এটি সম্ভব নয়। এটি যেহেতু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত, তাই এ নিয়ে আমরা নির্বাহী বিভাগ থেকে কমিশন গঠনের পরিপত্র বা সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করি। তারা যদি একটি লিখিত ডকুমেন্টস বা পরিপত্র জারির মাধ্যমে আমাদের নিশ্চিত করেন যে একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করা হবে তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক রাজপথ ছেড়ে আনন্দ মিছিল করতে করতে পড়ার টেবিলে ফিরে যাব।’
সারজিস আরও বলেন, ‘প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যতজন তরুণ চাকরি করে তার চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশি মানুষ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরি করে। আর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চেয়ে অনেকগুণ বেশি অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক চাকরি রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্ষেত্রে।
‘সুতরাং বাংলাদেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর দাবিকে পাশ কাটিয়ে, এসব দাবি পূরণ না করে আমরা অবিবেচকের মতো রাজপথ থেকে ফিরতে পারি না। আমাদের এক দফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।’
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আমাদের এই ব্লকেডে যতটা না মানুষের বিরক্তি দেখেছি তার চেয়ে বেশি দেখছি তাদের সমর্থন। কারণ প্রতিটি অভিভাবক তার সন্তানের ভবিষ্যৎ চান। সুতরাং সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ যতক্ষণ আমরা না পাচ্ছি ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।’