‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড় ছাড়াও চানখাঁরপুল, সায়েন্স ল্যাব, পল্টন মোড়, গুলিস্তান, নীলক্ষেত, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, মৎস্য ভবন, ফার্মগেট, আগারগাঁও, রামপুরা-বাড্ডা সড়ক অবরোধ করেছেন।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে কোটাবিরোধীদের এই অবরোধ-অবস্থানের কারণে পুরো ঢাকা এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল শুরু করেন। আর এই মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এরপর এই মিছিলের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মিন্টো রোড, মৎস্য ভবন, বাংলামোটর এবং কাওরান বাজার মোড় অবরোধ করেন।
এছাড়া একই সময়ে ইডেন মহিলা কলেজ আর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব মোড়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল ও শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থীরা চাঁনখারপুল মোড় ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার সংলগ্ন র্যাম্প অবরোধ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন পল্টন মোড়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল ইসলাম কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান মোড় অবরোধ করেছেন।
আর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রামপুরা-বাড্ডা সড়ক অবরোধ করলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেট মোড় অবরোধ করেন এবং আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এই অবরোধে দুর্ভোগ পোহাতে হলেও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে যৌক্তিক বলছেন পথচারীরা।
বিক্রমপুর থেকে গুলিস্তান এসে সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে শাহবাগে আসেন হানিফ দেওয়ান নামের একজন পথচারী। তিনি বলেন, ‘আমি যাবো ধানমন্ডি ১৫তে। হেঁটেই যেতে হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে একটু, তারপরও এটাকে আমি কষ্ট মনে করছি না। শিক্ষার্থীদের যেই দাবি সেটা আমারও দাবি। তারা যদি কোটার কারণে চাকরি না পায় তাহলে এটা ঠিক না।’
সুজিত পাল নামের আরেকজন বলেন, ‘আমিও গুলিস্তান থেকে হেঁটে আসছি। যাব আরও অনেক দূরে। আমাদের কষ্ট হচ্ছে, শিক্ষার্থীদেরও কষ্ট হচ্ছে। এটার একটা যৌক্তিক সমাধান হওয়া দরকার।’
গত ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন করে আসছেন চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীরা।
শুরুতে তাদের দাবি চারটা থাকলেও সোমবার থেকে তারা এক দাবিতে আন্দোলন করছেন। সেই এক দাবি হলো সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।’
সোমবার বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের শাহবাগ মোড় ছেড়ে বাংলামোটরের দিকে যেতে বাধা দিলে পুলিশ বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় এবং বাংলামোটরের দিকে দৌড়ে যান সেসব রাস্তা অবরোধ করতে।
এর আগে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন।
এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিভাগ, হল এবং ইনিস্টিটিউটের ব্যানারে অবস্থানে যোগ দেন। এরপর এই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর ও টিএসসি হয়ে শাহবাগে এসে মোড় অবরোধ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’; ‘কোটা ছেড়ে কলম ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’; ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কামব্যাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি সাড়ে বিকেল ৩টা থেকে শুরুর কথা থাকলেও আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের একটি রুমে বৈঠকে বসেন সরকারের একটি দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা। ফলে সেই বৈঠক শেষ করে প্রোগ্রাম শুরু করতে দেরি হয় শিক্ষার্থীদের। তবে এই বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি।