সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার করে আগামী বছর ‘সেবক’ নামে স্কিম চালু হলে এবং তাতে সবার জন্য সুযোগ-সুবিধা রাখা হলে আমরা সেখানে যাব। কিন্তু প্রত্যয় স্কিম বাতিল করতে হবে।”
অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, ‘এতদিন কোথায় ছিল। আমরা এতদিন বিবৃতি-স্মারকলিপি দিয়েছি, সংবাদ সম্মেলন করেছি। সাড়ে তিন মাস আগে যদি আমরা জানতাম বয়সসীমা ঠিকই আছে তাহলে শিক্ষকরা এত ক্ষুব্ধ হতেন না। এখন আন্দোলন স্তিমিত করার জন্য যেনতেন একটা ব্যবস্থা করছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের আমরা বিশ্বাস করি না। ২০১৫ সালেও এভাবে তারা আমাদের রাস্তায় নামিয়েছে। সুপার গ্রেড আমাদের দেয়নি। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, একটি কমিটিও হয়েছে।
‘বাস্তবতা হলো, নয় বছরেও আমরা সুপার গ্রেড পাইনি। তখনও আশ্বাস দিয়েছে। সুতরাং আশ্বাস দিলে হবে না। প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের নিয়ে বসতে হবে। আমাদের সুপার গ্রেড দিতেই হবে।’
ফেডারেশনের মহাসচিব আরও বলেন, ‘আপনারা আগামী বছর সেবক স্কিম আনবেন। সেবকে কী সুযোগ-সুবিধা আছে সেটি আমরা দেখব। সর্বজনীন হলে আমরা কেন যাব না। কিন্তু আমরা আলাদাভাবে যাব না সেখানে।’
এ সময় স্পেশাল ক্লাস-পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে বলে জানান অধ্যাপক নিজামুল। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাসে না নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি- এটা দুঃখজনক। তবে যে ক্ষতি হবে স্পেশাল ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে তাদেরকে পুষিয়ে দেয়া হবে।
স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
‘প্রত্যয় স্কিম’ সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যপরিষদ যৌথভাবে কর্মবিরতি পালন করছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি শুরু হয়। শিক্ষকরা অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন প্রাঙ্গণের ভেতরে আর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নেয় রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের মূল কেন্দ্র রেজিস্ট্রার ভবনের অনেক রুমেই নেই কোনো কর্মকর্তা। হাতে গোনা কয়েকজন থাকলেও তারা লাইট বন্ধ করে বসে অলস সময় পার করছেন।
আবার কিছু দপ্তরে চলছে কাজ। এসব দপ্তরে মূলত শিক্ষকদের কাজই হয়। শিক্ষার্থীদের কাজ সম্পর্কিত সব দপ্তর বন্ধ রয়েছে। অনেক কর্মকর্তা কর্মবিরতি উপেক্ষা করে কাজ করতে চাইলে তাদের কাজ না করতে চাপ দেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন অধিভুক্ত কলেজগুলো শিক্ষার্থীরা।
তাদের অনেকেই এসেছেন মূল সনদ বা অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে। অনেকের আবার এসব দরকার কয়েকদিনের মধ্যে। কিন্তু কর্মবিরতির কারণে তাদের ফেরত যেতে হয়েছে খালি হাতে। শুধু রেজিস্ট্রার ভবন নয়; বন্ধ রয়েছে বিভাগ, ইনিস্টিটিউট এবং হলের কার্যক্রমও।
ঢাবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সমাবেশ
এদিকে দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যপরিষদের আহ্বায়ক মো. আব্দুল মোতালেব।
তিনি বলেন, রাতের আঁধারে একটি কুচক্রী মহল এবং সচিবরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়েই সচিবালয়ে অফিস করতে যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিয়ে অফিসে যাওয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই। প্রয়োজনে আমরা তাদের যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেব।
আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘যত দিন যাবে আন্দোলন কঠোর হবে। শেষ পর্যন্ত আমাদের দাবি যদি না মানা হয় তাহলে আমরা কর্মবিরতি থেকে সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচিতে চলে যাব। সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হবে।’
চলমান আন্দোলনের সময় অফিসের কাজ করতে চাপ দেয়া হলে অফিস প্রধানদের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন ঢাবি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন চলা অবস্থায় কোনো অফিস প্রধান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন না। আগামীকাল থেকে আপনারাও মাঠে নামুন। অন্যথায় অফিস প্রধানদের কক্ষেও তালা মেরে দেয়া হবে। এরপরও যদি কেউ চাপ প্রয়োগ করেন তাহলে কর্মচারী পরিষদ তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে।’