ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে নেয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ডক্টরেট ডিগ্রি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে আয়োজিত বার্ষিক অধিবেশনে এ প্রস্তাব জানান সিনেট সদস্য শিক্ষাবিদ রণজিৎ কুমার সাহা।
এরপর বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও সিনেট সদস্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চানও একই প্রস্তাব তোলেন।
রণজিৎ কুমার সাহা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেয়ার যোগ্যতা ছিল না বেনজীর আহমেদের। তাকে বিশেষ বিবেচনায় অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু দেখা গেলো তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত করেছেন।
‘বেনজীরের যে থিসিস সেটা খুবই সাধারণ মানের ছিল, যেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যায় না। আমি তার ডিগ্রি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’
অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘ওনার না হয় একটা ডিগ্রির প্রয়োজন ছিলো, তিনি নামের আগে ডক্টর লাগাবেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কী এমন দায়বদ্ধতা আছে যে তার জন্য ভর্তির যোগ্যতা শিথিল করতে হবে?
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের পিএইচডি নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠে তখন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এটি নিয়ে কোনো তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি। আমরা বেনজীরের এমন নজিরবিহীন ডিগ্রি বাতিল করার দাবি জানাই।’
প্রসঙ্গত, বেনজীর আহমেদ ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন। যদিও ডিগ্রিটি নেয়ার প্রোগ্রামে ভর্তির যোগ্যতাই ছিল না তার। শর্ত শিথিল করে তাকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্য নিয়ে হট্টগোল
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আওয়ামী লীগ সব অযোগ্যদের উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছে- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্য ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।
সিনেট অধিবেশনের বক্তব্যে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসেন মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের নিন্দা প্রস্তাব করেন। উপাচার্য সেটি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে এটির প্রতিবাদ জানান বিএনপিপন্থী সিনেট সদস্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান ও অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম।
অধ্যাপক মাহবুব হাসান বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে কথা বলতে পারেন না। জাতি গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য অবদান রেখে চলেছে। আমি তার এই বক্তব্যের নিন্দা প্রস্তাব জানাচ্ছি।’
নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করে সিনেট চেয়ারম্যান ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘সেটা যেই হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে এমন কথা বলা উচিত নয়। এই কথা যিনি বলেছেন এটি তার রুচিরও বহিঃপ্রকাশ। এই নিন্দা প্রস্তাব রেকর্ড করা হলো।’
প্রতিবাদে বিএনপিপন্থী সিনেট সদস্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক বক্তৃতায় একজন রাজনীতিবিদ অনেক কথাই বলে থাকেন। সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে আলোচনা অমূলক। কেউ উপস্থাপন করে থাকলেও উপাচার্য মহোদয়ের সেটি আমলে নেয়া উচিত নয়।’
অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে কথা বলেছেন। তবে উনি সব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েই কথা বলেছেন। উপাচার্যরা অনিয়ম-দুর্নীতি করলে সেটা বলা অমূলক নয়। এটি নিন্দা প্রস্তাব করার মতো কোনো বিষয় নয়।’