মানিকগঞ্জ পৌরসভার দারুল আবরার ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে। প্রতিকার চেয়ে গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর ওয়াদুদ খান।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চর-বেউথা এলাকায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন আব্দুল ওয়াদুদ খান। প্রতিষ্ঠার পর তিন বছর পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
এরপর ২০১৫ সালে মৌখিকভাবে আহসান হাবিবকে মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনার জন্য পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ধীরে ধীরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের জায়গা সম্প্রসারণের জন্য মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালক আহসান হাবিবের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি।
পরবর্তীতে, ২০১৯ সালে জমি কেনার জন্য পরিচালকের কাছে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হয়। কিন্তু এর ফলে ওয়াদুর খানের সঙ্গে আহসান হাবিবের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও মাদ্রাসার অভিভাবকরা একাধিবার চেষ্টা করেও পরিচালক আহসান হাবিবের কাছ থেকে মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব আদায় করতে পারেননি। তখন থেকে শিক্ষার্থীদের পড়লেখার কথা চিন্তা করে স্থানীয় জনিপ্রতিনিধি ও সচেতন ব্যক্তিরা একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।
বর্তমানে মাদ্রাসায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী পড়লেখা করে। প্রত্যেকের কাছ থেকে পড়ালেখা ও খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ বাবদ সাড়ে ৩ হাজার টাকা আদায় করেন মাদ্রাসার পরিচালক। এরপর মধ্যে প্রায় ৫০জন শিক্ষার্থী অর্ধেক বা বিনা বেতনে পড়ালেখা করে আসছে।
স্থানীয় মো. শাহিনুর ও হারুন অর রশিদ জানান, আব্দুর ওয়াদুদ নিজের জমির ওপর মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ওই সময় ১৮ মাস মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিজ অর্থায়নের বেতন দিয়েছেন তিনি ও তার এক বন্ধু। মাদ্রাসাটিকে অনেক কষ্টে দাঁড় করেছেন তিনি।
তারা বলেন, বর্তমান পরিচালক আহসান হাবিব মাদ্রাসার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ভালোভাবেই সব চলছিল। তার কাছে মাদ্রাসার ফান্ডের টাকার হিসাব চাওয়ার পর থেকেই ওয়াদুদ সাহেবের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়।
তাদের দাবি, আহসান হাবিব একজন ঈমাম। শুনেছি, এর আগে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি ঈমাম হয়ে এত টাকা কোথায় পেলেন যে, এক কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে জয়নগ এলাকায় আরেকটি মাদ্রাসার নামে জয়াগা কেনেন?
এছাড়াও মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি বেরসকারি হাসপাতালে তার একাধিক শেয়ার আছে দাবি করে তারা জানান, পৌরসুপার মার্কেটে দোকানও কিনেছেন তিনি।
স্থানীয় কাউন্সিলর ও মাদ্রাসা পরিচালানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ নাহিদ বলেন, ‘মাদ্রাসার অনুদানের টাকার হিসাব আমাদের দেয়া হয়নি। আমরা দায়িত্ব নেয়ার সময় মাদ্রাসার ব্যাংক হিসাব শূন্য ছিল। এ কারণে পরিচালক মাদ্রাসার কোনো টাকাপয়সা অন্যত্র সরিয়েছেন কি না, তা সঠিক বলতে পারছি না। পরিচালনা কমিটি কোনো রশিদের মাধ্যেমে আমাদের হিসাব বুঝিয়ে দেয় নাই, মৌখিকভাবে হিসাব দিয়েছেন।’
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর ওয়াদুদ খান জানান, ‘আল্লাহকে খুশি করার জন্য নিজের জমিতে উপার্জিত কষ্টের টাকায় মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠতা করেছি। প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর মৌখিকভাবে আহসান হাবিব হুজুরকে পরিচালনার দায়িত্ব দেই। তিনি এই সুযোগে মাদ্রাসার নামে আসা অনুদানের টাকা যৌথ ব্যাংক হিসাবে (ইসলামী ব্যাংক মানিকগঞ্জ শাখা) না রেখে নিজের ব্যাংক হিসাবে রাখেন। এরপর মাদ্রাসার জায়গা সম্প্রসারণের জন্য ২০১৯ সালে তার কাছে টাকা চাই এবং দীর্ঘ ৫ বছরের সমস্ত আয়-ব্যয়ের হিসাবও চাওয়া হয়। তবে এক মাসের সময় নিয়েও আজ পর্যন্ত তিনি কোনো হিসাব দেন নাই।’
তার অভিযোগ, হিসাব চাওয়ায় পরিচালক আহসান হাবিব তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ প্রাণ নাশের হুমকি দেন। এছাড়া আগের সকল শিক্ষক ও স্টাফদের ছাঁটাই করে তিনি তার অনুগত শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগ দিয়েছেন।
মাদ্রাসার ছাত্রদের ভবিষ্যত ও প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতির জন্য পরিচালকের নিকট থেকে হিসাব গ্রহণ এবং পরিচালককে প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন প্রতিষ্ঠাতা আবদুর ওয়াদুদ খান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আহসান হাবির বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।’ এরপর ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেণ, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’