প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনরায় বহাল করার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সাধারণ সভা করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার-সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তরা কোটা পুনর্বহালে আদালতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, কোটা প্রদান করা হয় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে তোলার জন্য, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ইতোমধ্যে অনেকেই সরকারি চাকরিতে রয়েছেন। এই কোটা পদ্ধতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে এবং অযোগ্যদের হাতে প্রতিনিয়ত দেশকে তুলে দিচ্ছে। এই রায়ের মাধ্যমে তারা নতুনভাবে পাকিস্তান আমলের বৈষম্যপ্রথা পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছে। আবারও মুক্তিযোদ্ধা কোটা নামে নতুন বৈষম্যের সূচনা করেছে। সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা রাখা রীতিমতো মেধাশূন্য দেশ গড়ার পায়তারা ছাড়া কিছুই নয়।
মানববন্ধনে আন্তর্জাতিক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। অথচ আজকে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হাইকোর্ট কোটার পক্ষে রায় দিয়েছে।
‘মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিই প্রমাণ করে, এই কোটার রায়কে সবাই প্রত্যাখান করেছে। ২০১৮ সালের আন্দোলনে যে কোটা বাতিল করা হয়েছে, আদালতের এই রায়কেও আন্দোলনের মাধ্যমে একইভাবে প্রত্যাখ্যান করা হবে। যে রায়কে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছে, সেটা কখনও বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।’
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা মেহের আফরোজ শাওলী বলেন, ‘কোটা সমতা সৃষ্টির জন্য, কিন্তু সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা মেধাবীদের অবমূল্যায়ন। এ কোটাব্যবস্থা রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে সমতার পরিবর্তে অসমতার সৃষ্টি করবে। তাই অবিলম্বে এই রায় পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে কোটা বিলুপ্ত করতে হবে।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং উভয়ের চাওয়াই এক। আজকের আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরাও এই কোটার বিরুদ্ধে কথা বলছে। দেশের যেকোনো অন্যায় রায়কে এদেশের শিক্ষাথীরা প্রত্যাখ্যান করেছে। তেমনি কোটা নিয়ে অন্যায় রায়ের প্রতিবাদে আমরা শিক্ষার্থীরা মাঠে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
প্রসঙ্গত, বুধবার (৫ জুন) সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের করা এক রিটের প্রেক্ষিতে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেয়।