রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ ও এক নিরাপত্তা প্রহরীকে মারধরের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। মঙ্গলবার হল প্রাধ্যক্ষের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে ছাত্রলীগের এক নেতা ও দুই কর্মীর ছাত্রত্ব বাতিল ও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
বহিষ্কারের সুপারিশকৃত ছাত্রলীগ নেতা হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ছাত্রলীগের অপর দুই কর্মী হলেন শামসুল আরিফিন খান সানি হাজারি ও আজিজুল হক আকাশ। তারা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি হল প্রাধ্যক্ষ ও তদন্ত কমিটি।
হলের অতিথি কক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে ১১ মে রাত ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ছাত্রলীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় দফায় দফায় রামদা ও লাঠিসোঁটা হাতে একে অপরকে ধাওয়া দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল গেট ও মাদার বখ্শ হলের মধ্যবর্তী স্থানে দুই পক্ষ অবস্থান নিয়ে এই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরদিন সকালে তথ্য পাচারের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা আতিকের নেতৃত্বে শামসুল আরিফিন খান সানি ও আজিজুল হক আকাশসহ কয়েকজন সোহরাওয়ার্দী হলের নিরাপত্তা প্রহরী মনিরুল ইসলামকে মারধর করেন।
ঘটনা তদন্তের জন্য ১৪ মে সন্ধ্যায় তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. অনুপম হীরা মণ্ডলকে। বাকি দুজন সদস্য হলেন আবাসিক শিক্ষক ড. মো. ফারুক হোসেন ও তানজিল ভূঞা।
তদন্ত কমিটিকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও দুসপ্তাহ পর মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। প্রতিবেদনে আটটি সুপারিশ করেছে কমিটি।
প্রতিবেদনের অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- হলে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধান করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সংঘর্ষের ঘটনায় হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা, হলে অবস্থানরত অনাবাসিক ও বহিরাগতদের পুলিশি তল্লাশির মাধ্যমে হল থেকে বের করা, কেউ অবৈধভাবে শিক্ষার্থীকে হলে উঠালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, হলে ছাত্রলীগের ‘রুমওয়ার্ক’ বন্ধে কড়াকড়ি নির্দেশ দেয়া এবং হলের অতিথি কক্ষে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা বন্ধ করা।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ কর্মী শামসুল আরিফিন খান সানি হাজারি বলেন, ‘নিরাপত্তা প্রহরীর সঙ্গে একটা বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। গায়ে হাত দেয়া হয়নি। এই সামান্য বিষয় নিয়ে ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয়’।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক অনুপম হীরা মণ্ডল বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছি। এতে ঘটনার কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কিছু সুপারিশ হল প্রশাসনের কাছে করেছি। যদিও সেটা গোপনীয়। এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ ভালো বলতে পারবেন।’
তবে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘এটা গোপন বিষয়। আমরা চাচ্ছি গোপনেই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাব। এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’