লেইটেন্ট ট্যালেন্ট ডিস্কাভারিং অ্যান্ড ইমপ্লয়িং জোন (এলটিডিইজেড) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন ও কর্মসংস্থানবিষয়ক কর্মশালা।
ঢাবির আরসি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও বিশিষ্টজনরা।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন এলটিডিইজেডের চেয়ারপারসন, জাতীয় ফ্লুয়েন্সি অলিম্পিয়ডের সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা প্রশিক্ষক আরিফা বারী, ঢাবির বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ছাত্র ড. ফাদার তপন ডি রোজারিও।
কর্মশালায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের লেকচারার ইনজামাম মাহবুব মজুমদার। এতে প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন এলটিডিইজেডের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় ফ্লুয়েন্সি অলিম্পিয়ডের সভাপতি শাহরিয়ার ইমন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিয়া আফরিন।
ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড অ্যাঙ্করিং অ্যাসোসিয়েশনের (WAA) সাধারণ সম্পাদক শাম্মী আখতার ও প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ উইংয়ের সভাপতি সামিরা সুলতানা, ইংলিশ অ্যাজ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ টিচার্স অ্যান্ড লিডারশিপ অ্যাসোসিয়েশনের (ESLTLA) সভাপতি নাফিসা নাওয়ার নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ শাদমান।
ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব জার্নালিস্টস অ্যান্ড প্রেজেন্টার্সের (MAJAP) সভাপতি খালেদ মাসুদ সিফাত ও সাধারণ সম্পাদক আহনাফ আল উদ্ভাস, ডিবেট টু রেইনের (ODR) আহ্বায়ক রাইফা নাওয়াল জিনান এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড কনটেন্ট ক্রিয়েশন অ্যাক্টিভিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের (IASMA) সাধারণ সম্পাদক সামিয়া হক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে করে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে নিজেদের বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারে এবং বেকার না থেকে নিজেদের সঠিক কর্মপরিচর্যার মাধ্যমে কর্মসংস্থানে পদায়ন হতে ও করতে পারে, সেই উপলক্ষেই আজকের এই বিশেষ কর্মশালা।’
তিনি বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি, সেটি হলো আজকের এই কর্মশলার প্রধান প্রশিক্ষক শাহরিয়ার ইমন আমারই শিক্ষার্থী ছিলেন; এই বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগেরই সাবেক শিক্ষার্থী। এখন সে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মানুষকে একাধারে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধি করে দেশ-বিদেশে, এমনকি তার নিজের প্রতিষ্ঠানেও বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে।
‘তুমি যত ভালো শিক্ষার্থীই হও না কেন, গুরুত্বপূর্ণ স্কিল, অর্থাৎ ইংরেজি ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না। ইমন, যিনি মেধাবী হলেও ছিলেন একজন ব্যাকবেঞ্চার, কিন্তু তার প্রোডাকটিভ কর্মপদ্ধতির কারণে আমরাই তাকে এই ডিপার্টমেন্টে আমন্ত্রণ জানিয়েছি এই কর্মশালাটি নেওয়ার জন্য। তোমাদের মধ্যে যারা ব্যাকবেঞ্চার আছো, তারাও এই অনুপ্রেরণা নিতে পারো। ঠিক শাহরিয়ার ইমনের মতো তোমরাও এগিয়ে যেতে পারবে, রাজত্ব করতে পারবে বিশ্ব পরিমণ্ডলে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এলটিডিইজেড চেয়ারপারসন আরিফা বারী বলেন, ‘আমরা ২৫ হাজারের ওপরে শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছি এবং আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে হাজারো শিক্ষার্থী দেশ ও বিদেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে।’
নিজ ব্যর্থতার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছি, কিন্তু আজ আপনাদের সামনে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মশলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে এসেছি। আপনাদের অনুপ্রেরণা আমরাই। আমরা যদি পারি, আপনারা আরও বেশি পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চাকরির পেছনে না ঘুরে দক্ষতার পেছনে ঘুরুন, সময় দিন, অর্জন করুন। চাকরিই আপনার পেছনে ঘুরবে। প্রোডাকটিভ স্কিল, যেমন: ইংরেজি ও বাংলায় অনর্গল কথা বলা শিখুন, কম্পিউটারের বেইসিক স্কিলস শিখুন। আর একটু নেতৃত্ব শিখুন। ব্যাস, বিশ্বাস করুন, আপনি যদি এখানে ওয়ার্কোহোলিক হোন, শুধু বাংলাদেশকে নয়, বিশ্বকেও নেতৃত্ব দিতে পারবেন।’
বিশেষ অতিথি ড. ফাদার তপন ডি রোজারিও তার বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাকবেঞ্চার এই শাহরিয়ার ইমন। দ্রুত সময়ে নেইটিভদের মতো ইংরেজিতে কথা বলা শিক্ষায় একটি রেভ্যুলুশন তৈরি করেছে। যেমন ব্যাকবেঞ্চাররা ফ্রেঞ্চ রেভ্যুলুশন করেছিল, তেমনই আমাদের ডিপার্টমেন্টের ইমন, যে কিনা আজ দেশসেরা ইংলিশ প্রশিক্ষক। আমরা গর্বিত।
‘তোমরা যারা আজ এই কর্মশালায় উপস্থিত আছো, তোমাদের জন্য একটা কথাই বলব, আজকের এই কর্মশালাতেই সিদ্ধান্ত নাও যেন প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারো।’
ভাষা প্রশিক্ষক ও ওয়ার্ল্ড অ্যাঙ্করিং অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ উইং এর সভাপতি সামিরা সুলতানা বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নাই, বিশেষ করে ইংরেজির। আপনি কি এমন কাউকে দেখেছেন যে ইংরেজিতে অনর্গল ও শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে পারে কিন্তু তার মানসম্মত চাকরি হচ্ছে না?
‘আমরা যে ট্রেন্ডি সোসাইটিতে আছি, এখানেও আমরা তাকেই বেশি সম্মান করি, যে ইংরেজিতে অনর্গল। আর এই অনর্গল কথা বলার ক্ষেত্রে এলটিডিইজেড একটি রেভ্যুলুশন। আসবেন, শিখবেন এবং নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবেন।’
ভাষা প্রশিক্ষক ও অর্গেনাইজেশন অব ডিবেট টু রেইনের আহ্বায়ক রাইফা নাওয়াল জিনান বলেন, ‘আমি যে কিনা নিজের বাড়িতে কোন গেস্ট আসলে তাকে সালামও দিতাম না এই ভয়ে যে তাদের সাথে যদি কথা বলতে হয়, সেই আমি প্রথমে ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলা শিখি এবং পরে ডিবেট শিখি এই এলটিডিইজেড থেকেই এবং বঙ্গবন্ধু মেধা অন্বেষণ-২০২৩-এ চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করি এবং জাতীয়ভাবে রানারআপ হই। আমি বিশ্বাস করি, কথা না বলা সেই মেয়েটি আমি থেকে যদি আজ আন্তর্জাতিকভাবে নেতৃত্বে আসতে পারি, এখানে উপস্থিত সবাই নিজেদেরকে উদ্ভাসিত করতে পারবেন শতভাগ নিশ্চিত।’
ইংলিশ এজ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ টিচারস এন্ড লিডারশিপ অ্যাসোসিয়েশনের (ESLTLA) সভাপতি ও ভাষা প্রশিক্ষক নাফিসা নাওয়ার নোমানী বলেন, ‘আমরা যদি শুধু বিশ্বাস করতে পারি আমি পারব, তাহলেই হয়ে যাবে। কারণ, আমি আগে যখন কারও সামনে কথা বলতে বলা হতো, আমি সামনেই যেতে চাইতাম না। আমার ছোট বোনকে দেখে আসলে অবাক হই, তারপরে এখানে শুরু করি এবং আজ যেই আমাকে দেখতে পাচ্ছেন তার পেছনে রয়েছে হাজারো ঘণ্টার পরিশ্রম।
‘আপনি যদি নিজেকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে লিড দিতে চান, অবশ্যই আপনাকে সঠিক পদ্ধতিতে পরিশ্রম করতে হবে। দেখবেন, সফল আপনি হবেনই ইনশাআল্লাহ।’
ওয়ার্ল্ড অ্যাঙ্করিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি সামিরা সুলতানা তার বক্তব্যে বলেন, ‘একটি বিষয় খুবই ট্রান্সপারেন্ট, ভালো করতে হলে আপনাকে ভুল করতেই হবে। বারবার অনুশীলনের মাধ্যমেই ভুল সংশোধন হয়। তাই ভালো করার আগে ভুল হতেই পারে তাতে সমস্যা নাই।’
অনুষ্ঠনে উপস্থিত ভাষা প্রশিক্ষক ও বক্তাদের মাঝে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, এলটিডিইজেড চেয়ারপারসন আরিফা বারী ও প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার ইমন।
অনুষ্ঠানে এলটিডিইজেডের পক্ষ থেকে ঢাবির প্রতিশ্রুতিশীল ১০ শিক্ষার্থীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া হবে বলে জানানো হয়।