জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত কর্মচারীদের আবাসস্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ভবনসহ অন্য অ্যাকাডেমিক ভবন ও পার্শ্ববর্তী স্থানে বসবাসরত কর্মচারীদের তিন মাসের মধ্যে আবাসস্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানান।
রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আইনুল ইসলাম জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ভবনসহ অন্যা অ্যাকাডেমিক ভবন ও পার্শ্ববর্তী স্থানে কর্মচারীগণ যত্রতত্র বসবাস করায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে বসবাসকারী কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসস্থল আগামী ২৬ আগস্টের মধ্যে ত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, ‘আগে থেকেই বারবার বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা ছেড়ে যায়নি। আমাদের ক্যাম্পাস একবারই ছোট, নতুন প্রশাসন আসার পর বিষয়টি নজরে এসেছে এবং নির্দেশ দেয়া হয়েছে আবাসস্থল ত্যাগ করার জন্য, তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের তিন মাস সময় দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ছোট ক্যাম্পাসে কর্মচারীরা অনেকটা জায়গা নিয়ে থাকছেন। তারা এখানে পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে থাকছে। অপরিকল্পিতভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো বাসস্থান তৈরি করে রয়েছেন। এর ফলে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে পারে। বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তারা বিভিন্ন কৌশলে মৌখিক অনুমতি নিয়ে থেকেছেন। তাই তাদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
‘এদিকে ক্যাম্পাসে সীমিত সংখ্যক শিক্ষকের জন্য ডরমিটরি আছে, তবে কর্মচারীদের জন্য কোনো আবাসনের ব্যবস্থা নেই। তারা নিজেদের মতো করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ঘর বানিয়ে বসবাস করে আসছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি জামাল হোসাইন বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বিভিন্নস্থানে অবস্থানরত সিংহভাগই চতুর্থ শ্রেণির সহায়ক কর্মচারী। তৃতীয় শ্রেণির কয়েকজন কর্মচারীও পরিবার নিয়ে ক্যাম্পাসে থাকেন। সব মিলিয়ে ৯০টির মতোপরিবার বসবাস করছেন।’
তিনি বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রার পর থেকেই তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকছেন। ক্যাম্পাসে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় তারাই এগিয়ে আসেন। পানি, বিদ্যুৎ ছাড়াও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে এদের ক্যাম্পাসে থাকা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত বিষয়টি পুনরায় ভেবে দেখা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়ক কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে একটা চক্র রয়েছে যারা চায় না আমরা ক্যাম্পাসে থাকি। এটা তাদের হিংসা হয়। প্রতিবার একজন নতুন উপাচার্য এলে উনাকে আমাদের থাকার বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন আমরা এখানে থাকতে না পারি।’
তিনি বলেন, ‘চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের যা বেতন তা দিয়ে বাইরে বাসা নিয়ে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পরিবার, সংসার, ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোটানো যাবেনা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়লে পরিবার নিয়ে সবার পথে বসতে হবে।’
ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর আগে মৌখিকভাবে একাধিকবার আবাসস্থল ছাড়তে বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা এখানকার পুরাতন লোক, দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি। আমরা ক্যাম্পাসে গিয়ে উপাচার্য আপার সাথে কথা বলব।’
এর আগে ১২ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মধ্যরাতে এক ছাত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। মসজিদের যে জায়গায় নারীরা নামাজ আদায় করেন, মেয়েটি সেখানেই ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন বলে জানা যায়।
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মসজিদের ইমাম ছালাহ্ উদ্দীনকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সঙ্গে এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।