বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ববির আবাসিক হলে ছাত্রলীগের ভাঙচুর মারধরের অভিযোগ

  • প্রতিনিধি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ২৮ মে, ২০২৪ ২৩:০২

ছাত্রলীগকর্মী আবিদ হাসান বলেন, ‘কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেয়ে হলের ওই কক্ষটিতে তল্লাশি করি। তল্লাশি চালিয়ে দুটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছি। হল প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, তারা যেন এসব সন্ত্রাসীদের হল থেকে বিতাড়িত করেন।’

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শেরে বাংলা হলের একটি কক্ষে ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ভোলা রোডে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে আহত করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের ৪০২১ নম্বর কক্ষে তল্লাশি চালায় ছাত্রলীগের আরাফাত-রিদম গ্রুপ। এসময় তারা ওই কক্ষটি থেকে একটি জিআই পাইপ ও একটি বেসবল ব্যাটসহ দুটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেন। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভোলা রোডে ডেকে নিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন।

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- ববির লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও শেরে বাংলা হলের ৪০২১ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী প্রসেনজিৎ এবং একই বিভাগের আবির হাসান লিটন।

প্রসেনজিৎ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসান রক্তিমের অনুসারী অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত হলেও আবির হাসান লিটন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, কক্ষটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতৃত্বদানকারী অমিত হাসান রক্তিম ও তার অনুসারীরা থাকতেন। সোমবার রাতে হলে রক্তিমের অনুসারী লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুতত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মধ্য মারামারি হয়। সেই ঘটনার সূত্র ধরে মঙ্গলবার আরাফাত-রিদম ও শান্ত গ্রুপ শেরে বাংলা হলের ৪০২১ নম্বর কক্ষটি তল্লাশি করেন এবং ওই দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পাভেল এবং তার নেতৃত্বে মারামারিতে অংশ নেয়া ওই বিভাগের আরও কয়েকজন।

এ বিষয়ে হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, বিকেল ৩টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত শান্তসহ আরও ৬-৭ জন (৪০২১ নম্বর) কক্ষটির দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর তারা ভেতরে থাকা বেডপত্র বাইরে ছুড়ে ফেলতে শুরু করেন। এরপর লিটন ও প্রসেনজিৎকে ভোলা রোডে ডেকে নিয়ে পাভেলের নেতৃত্বে ওই বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী মারধর করেন।

তিনি জানান, ইট দিয়ে তাদের মাথায় আঘাত করা হয়েছে। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে তারা শের-ই-বাংলা বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

তিনি আরও জানান, মারধরের সময় আবুল খায়ের আরাফাত, খালিদ হাসান রুমি ও আলসামাদ শান্ত সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা মারধরে অংশ নেননি।

নিউজবাংলাকে উপরের তথ্যের পুনরাবৃত্তি করে আহত আবির হোসেন লিটন বলেন, ‘প্রসেনজিৎ ও আমি এখন শের-ই-বাংলায় (শেবাচিম) ভর্তি আছি।’

এ বিষয়ে জানতে আবুল খায়ের আরাফাতকে একধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মী পাভেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

রিদম-আরাফাত বরিশালের সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর অনুসারী। এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেয়া নেতা আবুল খায়ের আরাফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গ্রুপটির আরেক নেতা আবিদ হাসান গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী।

তাদের সমর্থক আলসামাদ শান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

অপরদিকে, অমিত হাসান রক্তিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। রক্তিমের পড়াশোনা শেষ হলেও তিনি অনুসারীদের নিয়ে ওই কক্ষটিতে অবস্থান করতেন।

অভিযোগ রয়েছে, কক্ষটি তিনি অবৈধভাবে দখল করে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রক্তিম বলেন, ‘আমি মাঝে মাঝে ঐ কক্ষটিতে যেতাম।’

কক্ষে অস্ত্র পাওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’

ছাত্রলীগকর্মী আবিদ হাসান বলেন, ‘কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেয়ে হলের ওই কক্ষটিতে তল্লাশি করি। তল্লাশি চালিয়ে দুটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছি। হল প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, তারা যেন এসব সন্ত্রাসীদের হল থেকে বিতাড়িত করেন।’

শেরে বাংলা হলের প্রভোস্ট ড. আব্দুল বাতেন চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনাটি আপনার থেকেই জানলাম। এখন হলে গিয়ে বিষয়টি দেখব।’

হল প্রশাসন থাকতে ছাত্রলীগ কীভাবে রুমে তাণ্ডব চালায়?- জবাবে প্রভোস্ট বলেন, ‘কোনো রুমে কোনোপ্রকার অভিযোগ থাকলে সেটি হল প্রশাসনকে জানাতে হবে। কেউ নিজে থেকে এভাবে তল্লাশি করতে পারে না। এ ব্যাপারে আমি তদন্ত করে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’

নিশ্চুপ হল প্রশাসন

হল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৪০২১ নম্বর কক্ষটি এখন পর্যন্ত কাউকে বরাদ্দ দেয়া হয়নি, কিন্তু ছাত্রলীগের নাম করে কক্ষটি দখল করে রেখেছিলেন রক্তিমের অনুসারীরা।

এর আগেও, শেরে বাংলা হলের একাধিক কক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে দেশীয় অস্ত্র ও মাদক সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে হল প্রশাসন। অথচ সেসব বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, হল প্রশাসনের এমন নিশ্চুপ থাকা কারণেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বারবার পার পেয়ে যায়। এতে তারা আরও বেশি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে ঝুঁকছেন।

উল্লেখ্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকলেও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে এ ছাত্র সংগঠনের পক্ষে রাজনীতি করেন। বিভিন্ন গ্রুপ থাকায় আধিপত্য বিস্তার ও এ নিয়ে মারামারি এ ক্যাম্পাসে নতুন কিছু নয়।

এ বিভাগের আরো খবর