বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে জবিতে মানববন্ধন

  • প্রতিনিধি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ২৬ মে, ২০২৪ ১৮:০১

মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম সুন্দর একটা স্কিম, কিন্তু একটি মহল অল্প কয়েকজন পেশাজীবীকে অন্তর্ভুক্ত করে নিজেদের আওতামুক্ত রেখেছে। এ ধরনের স্কিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। সর্বজনীন শব্দটার যথার্থ ব্যবহার হওয়া উচিত। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। দাবি আদায়ে তীব্র আন্দোলন করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শিক্ষকরা মানববন্ধন করেছেন।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে শহিদ মিনার চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশন বৈষম্য দূরীকরণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তারা।

মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম সুন্দর একটা স্কিম, কিন্তু একটি মহল অল্প কয়েকজন পেশাজীবীকে অন্তর্ভুক্ত করে নিজেদের আওতামুক্ত রেখেছে। এ ধরনের স্কিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। সর্বজনীন শব্দটার যথার্থ ব্যবহার হওয়া উচিত। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। দাবি আদায়ে তীব্র আন্দোলন করতে হবে।

মানববন্ধনে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম বলেন, ‘আমরা তো শিক্ষক মানুষ, কম বুঝি হয়তো! তাই আমাদের ওপর এ পেনশন স্কিম চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। স্কিমে কন্ট্রিবিউট করলে পাবে, না হলে পেনশন পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটাকে হেয় করার জন্য এমনটা করা হচ্ছে। দেশে কোনো সমস্যা না থাকলে, আমলারা সমস্যা সৃষ্টি করে। দেশ যখনই শান্তিতে চলে, তখনই আমলারা নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে।’

অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, ‘সরকার যে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে হলেও শিক্ষকদের দাবি মানা উচিত।’

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক রইছ উদ্দীন বলেন, ‘পেনশন স্কিমের উদ্যোগ যারা নিয়েছেন তারাই এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তাহলে সর্বজনীন কীভাবে হলো? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জৌলুশ নষ্ট করার জন্য, সরকারকে ভুল বোঝানোর জন্য এই স্কিম তৈরি করা হয়েছে। আত্মমর্যাদা টিকিয়ে রাখার জন্য শিক্ষক রাজনীতির কালার চয়েজ বাদ দিয়ে সব শিক্ষককে একসঙ্গে হতে হবে।’

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমাদের উচিত দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস না নেয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসব, কিন্তু ক্লাস নেব না।’

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বৈষম্যহীন সমাজ চেয়েছে। কিন্তু এ প্রত্যয় স্কিমে মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থাকতে এ বৈষম্য কখনই আমরা মানব না।’

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বলেন, ‘শিক্ষকেরা সহজে কিছু পান না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে, কোনো অযৌক্তিক কিছু আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারত না। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ না থাকায় আমাদের ওপর এই স্কিম চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। কঠোর আন্দোলন করতে হবে।’

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘সর্বজনীন বলতে যা বুঝি, সেখানে হয়তো গরমিল আছে আমার বোঝার। একশ্রেণিকে বাদ দিয়ে কিছু অংশকে স্কিমের আওতায় আনা কীভাবে সর্বজনীন হয়। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, পেশাজীবীদের মধ্যে সর্বজনীনতা বজায় রাখার নিশ্চয়তা করতে হবে। কালো প্রথা চালু করার আগে সরকারকে আরেকবার ভাবার অনুরোধ করছি।’

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিমে বয়সসীমা ৬০ বছর দেয়া, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বয়সসীমা ৬৫ বছর। এখানে একটি ধোঁয়াশা রয়েছে। তা ছাড়া আমলারা নিজেরা এই স্কিমের আওতাভুক্ত না হয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংযুক্ত করে বড় বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। আমাদের দাবি মানা না হলে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী মঙ্গলবার দুই ঘণ্টার কর্মবিরতিতে যাব।’

জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সরকার প্রথমে চালু করেছিল যারা পেনশন সুবিধা পান না তাদের জন্য, কিন্তু পরে কোনো এক কুচক্রীমহল এটা করেছে। পরবর্তী কর্মসূচিতে যাতে যাওয়া না লাগে, তার আগেই আশা করি সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে। প্রত্যয় স্কিম থেকে শিক্ষকদের বাদ দিতে হবে।’

ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে আগামী ২৮ মে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২ ঘন্টার কর্মবিরতি এবং ৪ জুন সকাল ৮টা ৩০ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। এ সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন কর্তৃক ঘোষিত কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান শিক্ষক নেতারা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানরাসহ শিক্ষকরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগ দেয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।

এ বিভাগের আরো খবর