স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ।
সমাবেশে বিশ্বের মোড়লদের প্রতি প্রশ্ন রেখে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, কবে তুমি এটিকে গণহত্যা বলবে? কত হাজার মরলে মানুষ বলবে তুমি শেষে, বড্ড বেশি মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে।
সমাবেশ থেকে ছাত্রলীগ দাবি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজায় সংগঠিত এই গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অবিলম্বে বৈশ্বিক স্বীকৃতি দিয়ে এই অপরাধের বিচার করতে হবে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে এ সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা পাশাপাশি উত্তোলন করে সমাবেশ শুরু করা হয়।
এর আগে সকাল থেকেই ফিলিস্তিন আর বাংলাদেশের পতাকা হাতে মধুর ক্যান্টিনে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর সাথে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের নেতা-কর্মীরা। পরে মধুর ক্যান্টিনের সামনে থেকে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। পতাকা হাতে পদযাত্রাটি প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাস এলাকা। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগানও দেন অংশগ্রহণকারীরা।
সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, প্যালেস্টাইনে আগ্রাসনের জন্য যারা অস্ত্র এবং অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে ইতিহাসের কী অমোঘ পরিণতি, সেখান থেকেই দুর্বার প্রতিবাদের জয়ধ্বনি তৈরি হয়েছে। যারা বিভিন্ন সময়ে ইউনাইটেড নেশনস এর সিকিউরিটি কাউন্সিলে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার জন্য ভ্যাটো দিয়েছে সেই দেশের তারুণ্য আজ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য হ্যাঁ বলেছে।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, যারা গণতন্ত্রের মোড়ল, যারা বাক স্বাধীনতার সার্টিফিকেট দেয়, যারা বলে দেয় কোন দেশটি গণতান্ত্রিক আর কোন দেশটি-অগণতান্ত্রিক, যারা গণতন্ত্রের টেন্ডার নিয়েছে সারা জীবনের জন্য, যারা ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেসন, রাইট টু প্রটেস্ট এবং পিচফুল এসেম্বলির কথা বলে আমরা দেখছি তাদের আসল মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর যারা নিপীড়ন নির্যাতন তাদের আমরা ধিক্কার জানাই।
তিনি বলেন, প্যালেস্টাইনে যারা আগ্রাসন পরিচালনা করছে স্কুল কলেজ হাসপাতালে যারা আক্রমণ করে হাজার হাজার মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করছে তারা ওয়ারক্রাইম এর অভিযোগে অভিযুক্ত। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত। ইন্টারন্যাশনাল কোড অফ ক্রাইমস অ্যান্ড ট্রাইবুনালের মাধ্যমে তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে এই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিষ্পন্ন করতে হবে। গাজায় আমরা অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি চাই।
এ সময় সাদ্দাম হোসেন মেমোরেন্ডাম ফর পিচ নামে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
বাংলাদেশের অধ্যায়নরত ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থী ইসহাক আহমেদ বলেন, আমার ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য আপনারা আজকে এখানে সমাবেশ করছেন এজন্য আপনাদেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই। ৭৫ বছর ধরে আমরা আগ্রাসন, নির্যাতন আর দখলদারিত্বের শিকার হচ্ছি। গাজায় ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে যারা তাদের স্কুল,কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। ইনশাল্লাহ আমরা একদিন এই অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাবো।
বাংলাদেশে অধ্যয়নরত আরেক ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ বাদাওয়ী বলেন, আমাদের জীবন, আমাদের স্বপ্ন, আমাদের ভবিষ্যৎ করা হচ্ছে। আমরা শান্তি, ন্যায় বিচার আর মানবাধিকার চাই যেটি প্রতিটি মানুষের অধিকার। আমাদের দাবি, অবিলম্বে এই গণহত্যা বন্ধ করতে হবে। আমরা যুদ্ধবিরতি চাই। আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমাদের শিশুরা আজকে যখন দুধে-ভাতে থাকছে তখন ফিলিস্তিনের শিশুরা অনাহারে মরছে। তাদের হাসপাতালগুলোতেও বোমা হামলা করা হচ্ছে যেটি আমরা কোন যুদ্ধের নীতিতে দেখিনি। সেই ঘটনাও ঘটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট ইসরাইলি বাহিনী। আমরা অবিলম্বে ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বিরতি চাই, আমাদের দাবি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হোক।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নসহ ঢাকার দুই মহানগরের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য রাখেন। এ সময় সমাবেশে কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, ঢাবির বিভিন্ন হল শাখা ও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।