কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানকে গাড়িসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে পথরোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
এ কাজে বাধা দেয় শিক্ষকদের আরেকটি পক্ষ। এতে করে শিক্ষকদের দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে।
দুই পক্ষের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পথরোধ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে গাড়িতে অবস্থান করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ।
তারা জানান, এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শিক্ষক সমিতির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়, কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় এবং প্রক্টরের কার্যালয়ে তালা দিতে যান। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিতে গেলে তারা দেখেন প্রশাসন থেকে আগে থেকেই উপাচার্য দপ্তরে তালা দেয়া।
পরবর্তী সময়ে তারা প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হয়ে দেখেন কোষাধ্যক্ষ তার গাড়ি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় তারা মূল ফটকে অবস্থান নেন এবং তাদেরকে কোষাধ্যক্ষকের গাড়ির চাবি দিয়ে চলে যেতে বলেন, কিন্তু ট্রেজারার তাদের কথার সঙ্গে একমত না হওয়ায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক বন্ধ করে কোষাধ্যক্ষকে পথরুদ্ধ করেন।
তারা আরও জানান, এ সময় শিক্ষকদের একটি অংশ শিক্ষক সমিতির সঙ্গে তালা লাগানো নিয়ে বাকবিতণ্ডা করেন। তারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা সংস্কৃতি বন্ধ চান বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়য়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ভর্তি পরীক্ষার দিন কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। কিন্তু তারা পরবর্তীতে লিখল, শিথিল থাকবে। এটা এক প্রকার প্রতারণা। আমরাও শিক্ষক সমিতির সদস্য। এভাবে শিক্ষক সমিতি খেয়াল খুশি মতো চলতে পারে না।
‘আমরা এ তালা সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চাই। কিছু হলেই তালা লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করি।’
কুবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক মেহেদি হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যত অনিয়ম হচ্ছে তার সহায়ক হচ্ছেন কোষাধ্যক্ষ। আর এই অনিয়মগুলো তিনি চালু করেছেন। এই কারণে শিক্ষকরা সাধারণ সভায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন, সে কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পরিষেবা পাবেন না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের মূল দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রক্টর হিসেবে যদিও শিক্ষার্থীদের ওপরে আমার দায়িত্ব, তারপরেও সার্বিক শৃঙ্খলার ব্যাপারটা আমাদের ওপরে আসে।
‘আজকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। আজকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত কোষাধ্যক্ষকে তারা এভাবে পথ আটকে দিয়েছে। আমি মনে করি শিক্ষক হিসেবে তারা নৈতিকতার জায়গা লঙ্ঘন করেছে।’
গাড়িতে থাকা কুবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিচ্ছে উপাচার্য স্যার। এখন বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে, সচল রাখতে কী করণীয় সে বিষয়ে স্যারের সঙ্গে কথা বলার জন্য যাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মইনকে ফোন দেয় হলে তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
গত ২৩ এপ্রিল শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি চিঠিতে তাদের ৭টি দাবি মেনে নেয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। শিক্ষক সমিতির দেয়া সাত দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২৫ তারিখ সকালে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষের ও প্রক্টরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের কার্যালয়ে তালা দেন, তবে শনিবার (২৭ এপ্রিল) গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থাকায় শিক্ষক সমিতি তাদের কর্মসূচি শিথিল করে এবং তালা খুলে দেয়।
অফিস সময়সূচি শেষ হওয়ার পর শনিবার তারা আবারও তালা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন দপ্তরে।