বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বুয়েটের ছাত্রলীগমনা ২১ শিক্ষার্থীর প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি

  • প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ৪ এপ্রিল, ২০২৪ ২২:০৭

এর আগে প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দিয়েছিল ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

নিরাপদ ক্যাম্পাস, নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা এবং সাহসের সঙ্গে প্রগতিশীল রাজনীতি চর্চা করার অধিকার চেয়ে এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রলীগমনা শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই খোলা চিঠি পাঠ করেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বুয়েটের ২১ শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে আমাদের এই খোলা চিঠি।’

এর আগে প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দিয়েছিল ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রলীগমনা শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠিতে বলা হয়, ‘হে দেশরত্ন, বঙ্গবন্ধু তনয়া, আমাদের সাহায্য করুন। আমরা স্বাভাবিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই। আমরা চাই না যে আমাদের ক্যাম্পাস জঙ্গী তৈরির কারখানা হোক। আমরা চাই না দেশে দ্বীপ ভাই, সনি আপু ও আবরার ফাহাদ ভাইয়ের মতো নির্মম ঘটনা ঘটুক। আমরা দ্বিতীয় কোনো হলি আর্টিসান ঘটনাও চাই না। আমরা চাই না তন্ময় ভাইয়ের মতো কেউ শিবিরের নৃশংস হামলার ক্ষতচিহ্ন নিয়ে জীবনযাপন করুক।’

হিজবুত তাহারীর বা শিবিরের সন্ত্রাসী আক্রমণ থেকে কতটা নিরাপদ বুয়েটের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি- এমন প্রশ্ন তুলে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র মেধাবীদের এই ক্যাম্পাসকে কতটা নজরদারিতে রেখেছে বা এর প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করছে আমরা জানি না। যেকোনো বড় ধরনের নাশকতার ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলে হলি আর্টিসানের মতো কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশংকা করছি আমরা ক্যাম্পাসের প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ।’

তারা বলেন, ‘এ বিষয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা কতটুকু তাও আমরা জানি না। অতিসত্ত্বর বুয়েট নিয়ে তাদের কার্যক্রম জোরদার করার দাবি জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খোলা চিঠিতে বলা হয়, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতিকে একপ্রকার নিষিদ্ধ কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আমরা প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমরাও অংশ নিতে চাই দেখে আমাদের ক্যাম্পাসে দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক নিপীড়ন চলে আসছে, যা বর্তমানে আমাদের জীবনের হুমকিতে রূপ নিয়েছে।

প্রধামন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়ে খোলা চিঠিতে বলা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রতি এবং আপনার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আমরা আমাদের আকূল আর্জি রাখলাম, আমাদের নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। দেশ ও দশের প্রতি ভালোবাসা রেখে সকলের কল্যাণকে মাথায় রেখে আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপদে এবং সৎ সাহসের সঙ্গে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করতে চাই।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের অপদস্ত হতে হচ্ছে দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আমরা বলতে চাই, শুধুমাত্র স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য যে পরিমাণ বুলিং করা হয়েছে আমাদের ওপর, তা অকথ্য। আবরার ফাহাদ ভাইয়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়, কিন্তু এরপর র‍্যাগিং বা এর সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আইনভঙ্গের অভিযোগ না থাকলেও সংখ্যালঘু ছাত্রদের ওপর শুরু হয় পাবলিক হিউমিলিয়েশন (গণ অপদস্ত) এবং ডিফেমেশন (সম্মানহানি) যা হয় শুধুমাত্র স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণে।

শিবির এবং হিজবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে শিক্ষার্থীদের জবাবদিহিতা, বুলিং এবং সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে খোলা চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মনন চর্চার মুক্তমঞ্চ, বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলবাদ-বিরোধী অবস্থান রাখাকে কীভাবে অভিযোগ হিসেবে তুলে ধরা হয় তা আজও জবাবদিহিতা চাওয়া প্রত্যেক ছাত্রের প্রশ্ন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের দুইজন সহপাঠীকে আহসান উল্লাহ হলে রাত এগারোটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত জবাবদিহিতার নামে প্রহসনমূলক র‍্যাগিং বা বুলিং এবং কমন রুম ও মাঠে একটানা অপমান করা হয়। আমাদের নিচু দেখিয়ে কথা বলাও শুরু হয় এবং হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র মতপ্রকাশ করেছিলাম। স্বধীন এই বাংলায় এই অধিকার কি আমাদের নেই? পরবর্তীকালে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছাত্ররা এক রাতে একসঙ্গে বসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা ও খাওয়া-দাওয়া করলে আবারও ছুটে আসে সোশ্যাল ডিফেমেশন এর কালো ছায়া। এতে প্রমাণবিহীনভাবে রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিত থাকার বানোয়াট ও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল গ্রুপ থেকে বের করে দেয়া হয়।

‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের ক্লাব থেকে বের করে দেয়া হয়। এমনকি ক্লাস শিডিউল ও পরীক্ষার রুটিন সঠিক সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রদের না জানানোর আদেশ দেয়া হয়। আমরা এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করলেও কোনো মীমাংসা আজও পাইনি।’

চিঠিতে বলা হয়, সর্বশেষ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের ক্যাম্পাসে আসা এবং তার সঙ্গে সৌজন্যে সাক্ষাতের কারণে ইমতিয়াজ রাব্বিকে বহিষ্কারের দাবি করা হয় এবং উপাচার্য মহোদয় কোনো তদন্ত ছাড়াই সেই দাবি গ্রহণ করেন। এই আন্দোলন ক্যাম্পাসে শান্তির পরিবেশ নষ্ট করে যা পরীক্ষা বয়কটের মতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এরই সঙ্গে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানি এবং ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হচ্ছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, আমাদের উক্তিতে উঠে আসা ঘটনাগুলোতে সবসময়ই হোতা কিছু নির্দিষ্ট মানুষই, যাদের সঙ্গে শিবির সন্দেহে আটককৃতদের সম্পৃক্ততা এবং মৌলবাদী চিন্তা পালনের দৃষ্টান্ত মেলে। অনেক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক মতামত প্রতিষ্ঠার জোরও চালানো হয় তাদের দ্বারা। তবে এই অন্ধকার রাজনীতি আড়াল নেয় আবরার ফাহাদ ভাইকে হারানোর বেদনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে ব্যবহার করে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী এবং ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনা’ বিষয়ক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে- দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, এর জন্যই কি আমাদের এই স্বাধীনতা? জাতির জনকের জন্মবার্ষিকীতে ইফতার বিতরণ কীভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়?

চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে এই সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আমাদের জীবন হুমকিসহ নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে। শিবির দ্বারা পরিচালিত ‘বাঁশের কেল্লা’র পক্ষ থেকে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আমাদের জীবন হুমকিতে। হে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের রক্ষক, আপনি সহযোগিতা করুন, আমাদের আবেদন শুনুন।’

এ বিভাগের আরো খবর