বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে মন্তব্য করে এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে ছাত্রদল। আর এই সংহতিকে রাজনৈতিকভাবে মদদপুষ্ট উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন ছাত্র রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন শিক্ষার্থী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তাতে বলা হয়, “ছাত্রদলের নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ছাত্রদল একটি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি চর্চায় বিশ্বাসী। ছাত্রদল বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে।’
“আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা, ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে চলমান আন্দোলনের এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে ছাত্রদলের এমন বক্তব্যকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করি এবং তাদের এই ‘রাজনৈতিকভাবে মদদপুষ্ট সংহতি’কে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।”
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০২০ সালের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে ছাত্রদল যখন বুয়েটে তাদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে তখনও এই কার্যকলাপের তীব্র প্রতিবাদ করে উপাচার্য ও ডিএসডব্লিউ স্যারের কাছে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন করা হয়। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা তখনও এর প্রতিবাদ জানাই এবং সামনেও আমরা ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি প্রবেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখব।’
একইসঙ্গে বলা হয়, ‘পরবর্তীতে অন্য কোনো সংগঠনও যদি এমন বক্তব্য দিয়ে আমাদের আন্দোলনের দাবি ও অবস্থানকে ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় তবে আমরা তাদেরকেও প্রত্যাখ্যান করব।’
‘একক ছাত্র সংগঠন নয়, আমরা ছাত্ররাজনীতিরই বিরুদ্ধে’
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা আবারও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই, আমাদের অবস্থান কোনো একক ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়। আমরা ছাত্ররাজনীতি-ই ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিরুদ্ধে। অতএব এটি করতে চায় এমন যেকোনো সংগঠনের বিরুদ্ধেই আমাদের অবস্থান সমান এবং অনঢ়।
‘হিজবুত তাহরীরের মতো নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনের অস্তিত্বকেই আমরা সমর্থন করি না। সেখানে এরূপ নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থন বা সহানুভূতি গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না।’
‘রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ক্যাম্পাস হারাতে চাই না’
বুয়েটে বর্তমানে কোনো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনৈতিক দলেরই কার্যক্রম নেই দাবি করে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সোচ্চার ভূমিকার প্রতি সর্বদাই আস্থাশীল এবং সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করি।
‘শত শত শিক্ষার্থীর ভোগান্তি, আর্তনাদ আর সনি আপু, দ্বীপ ভাই ও আবরার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে যে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাস আমরা অর্জন করেছি, কোনো রাজনৈতিক অপতৎপরতায় আমরা সেই অর্জন হারাতে রাজি নই।’
‘তাই আমাদের বর্তমান আন্দোলনে হস্তক্ষেপ অথবা আন্দোলনকে পুঁজি করে যেকোনো স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা এবং একইসঙ্গে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার যেকএনা সম্ভাব্য প্রচেষ্টাকে আমরা ধিক্কার জানাই’- যোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
‘৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে’
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘গত দুদিন আমরা জনমত নিরীক্ষণের জন্য নিজেদের নিজ নিজ ইনস্টিটিউশনাল মেইল ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষে অনলাইনে ভোট গ্রহণ করি। এই ভোটে অংশগ্রহণ করেন ৫ হাজার ৮৩৪ জন। আর তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৬৮৩ জনই ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে স্বাক্ষর দিয়েছেন।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। সুতরাং আমাদের অবস্থানের যথার্থতা এখানে প্রমাণিত।’
১৩ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে বুয়েট
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ-বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলন আর পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে লম্বা ছুটিতে যাচ্ছে বুয়েট।পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ মিলে বৃহস্পতিবার ৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ দিনের ছুটি পাচ্ছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ১৭ এপ্রিল থেকে একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে।
আর বুয়েটে প্রশাসনিক ছুটি শুরু হবে ৯ এপ্রিল, চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ১৫ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে।