বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও বুয়েটকে ছাত্র রাজনীতির বাইরে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
চিঠিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি। আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন; ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুয়েটে রাজনীতির বিপক্ষে ছিলেন দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, বুয়েটকে নিয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে পলিসি গ্রহণ করেছিলেন, তার বাস্তবায়ন করুন।’
মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা এই খোলা চিঠি পাঠ করেন।
খোলা চিঠিতে যা বলা হয়েছে তা হুবহু পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-
আমরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত পাঁচ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী আপনার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে সবিনয়ে আমাদের দু-চারটি কথা এবং আমাদের আর্জি আপনার কাছে নিবেদন করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের স্বপ্নসারথী, বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে আপনি দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলেছেন। আপনি দেশকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে নিয়ে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন, সেই একই স্বপ্ন বুকে ধারণ করে নিজেদের শ্রম-মেধা-মনন কাজে লাগিয়ে নিরঙ্কুশ অধ্যবসায়ের পর আপনার গর্বের এই দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে আমরা পড়ার সুযোগ করে নিয়েছি।
আমরা করোনার সেই বিপদ মুহূর্তে বানিয়েছি লো কস্ট ভ্যান্টিলেটর, ক্লিন সিটির আশায় পরিত্যক্ত মাস্ক থেকে বানাচ্ছি কনক্রিট, আরও খুঁজছি বিদ্যুতের সহজ উপায়, বানাচ্ছি আর্টিফিসিয়াল আর্মস, সার্জিক্যাল টুলস। পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাদের বুয়েট শিক্ষক এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের অবদান অনবদ্য।
শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্য দেশের দলগুলো যাদের জন্য বরাদ্দ থাকে আমাদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ এবং গবেষণাগারের সুবিধা, তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা ছিনিয়ে আনছি বিজয়। আপনি নিঃশর্তভাবে আমাদের অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন এসব গবেষণা খাতে।
রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না, শুধু দেশকে ভালোবাসতে জানি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের অভিভাবক। আমরা নিজেদের মেধা ও শ্রমের সবটুকু দিয়ে বিজ্ঞানের অবাক করা দুনিয়ার একটা অংশের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে দেখতে চাই। আমরা ত্রাসের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না। আমরা শুধু দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি মানবকল্যাণব্রতী, আপনি আমাদের সকলের অভিভাবক, আপনি দেশের অভিভাবক। বিগত বছরগুলোতে আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা ঘটেছে আধিপত্য, দাপট, র্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন, খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মতো ঘটনা।
এর ব্যাপ্তি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ’৯৯-এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল ’০৯-এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সবশেষ তড়িৎকৌশল ’১৭-এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি।’
র্যাগিংয়ের মাধ্যমে নির্যাতনের বর্ণনা
শুধুমাত্র আবরার ফাহাদ ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডই নয়, এর পূর্ববর্তীতেও অসংখ্য শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের দ্বারা কিংবা ছাত্ররাজনৈতিক দাপটের দ্বারা অমানুষিকভাবে নিপীড়নের ঘটনা রয়েছে, যা আমাদের বুয়েটের র্যাগিং স্টোরি আর্কাইভে সারি সারি আকারে লিপিবদ্ধ আছে।
কয়েকজন শিক্ষার্থীর নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে খোলা চিঠিতে বলা হয়, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার শাহরিয়ারকে স্টাম্প দিয়ে রাতভর বেধড়ক মারধর করা হয়। ১৭ ব্যাচের মেহজাদ গালিবকে নগ্ন করে সোহরাওয়ার্দী হলের ছাদে তুলে স্টাম্প দিয়ে সারারাত মারা হয়।
‘১৫ ব্যাচের সামিউত তৌসিফকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয়া হয়। মারতে মারতে তিনটি স্টাম্প ভেঙে ফেলা হয়। এই সামিউত তৌসিফ ছিলেন এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তার চাচা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। তার লিগামেন্ট ছিঁড়ে পায়ে ফ্র্যাকচার হয়ে যায়।
‘সালাম না দেয়াতে সাখাওয়াত অভির হাত ভেঙে ফেলে আবরার ফাহাদের হত্যাকারী অমিত সাহা। সৌমিত্র লাহিড়ী থাপ্পড় দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলে একজনের। এরকম আছে আরও অসংখ্য কাহিনী।’
ছাত্ররাজনীতি কেড়ে নিয়েছে স্বাধীনতা
খোলা চিঠিতে বলা হয়, দাপটের আড়ালে ছাত্ররাজনীতি আমাদের ক্যাম্পাসে উন্মুক্তভাবে বিচরণের অধিকার, ক্যাম্পাসের সুস্থ একাডেমিক পরিবেশ, আমাদের স্বাধীনতা, হলের মেসের টাকার সৎ সদ্ব্যবহার, ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত থাকা, নবীন আগত বুয়েটিয়ানদের একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন উপভোগের অধিকার সবকিছুই হারিয়ে গিয়েছিল। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছে যেখানে ক্ষমতাচর্চার লোভ-লালসার শিকলে আবারও জিম্মি হয়ে যাবে না সকলের নিরাপত্তা, শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ। সুস্থ নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ব্যতীতও গত কয়েক বছরে উপস্থিত ছিল এবং এতে সুস্থ নেতৃত্বের চর্চায় শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে।
গবেষণায় মনোযোগী শিক্ষার্থীরা
বর্তমান বুয়েটে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ থাকায় নিজ নিজ প্রকৌশল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণামুখী কাজে মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, একটি রাজনীতিবিহীন নিরাপদ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য সারা দেশব্যাপী জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং সমাদৃত হয়েছে। রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাসের গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব সফলতা আমাদের জানান দেয়, আমরা আমাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ব্যতীতও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন নেতৃত্ব গঠন এবং বিকাশ প্রয়োজন, তা করতে পারি; স্মার্ট বাংলাদেশ-এর লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিরন্তর কাজ করে যেতে পারি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জেনে খুশি হবেন যে, বাকি সব প্রকৌশল-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বুয়েটেও থিসিসের জন্য রিসার্চ টাস্ক চতুর্থ বর্ষে আবশ্যক হলেও আমাদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আগে থেকে বিভিন্ন রিসার্চ-প্রজেক্টে নিজ ইচ্ছায় অংশগ্রহণ করছে।
এছাড়াও দেশ-বিদেশে বিভিন্ন প্রকৌশল প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বুয়েটিয়ানদের সাফল্য গত সাড়ে চার বছরে সুস্পষ্টভাবে বেড়েছে।
শিক্ষার্থীদের অর্জনের বর্ণনা
প্রধানমন্ত্রী, আপনি জেনে আরও খুশি হবেন যে তথ্য-প্রযুক্তিতে আমরা কতটা এগিয়ে যাচ্ছি, আন্তর্জাতিক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় আমাদের অর্জন স্বর্ণপদক। Young Engineering and Scientist’s Award-এর মতো সমাদৃত অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বুয়েটের ৬ জন এবং শুধু গত বছরই পেয়েছে চারজন শিক্ষার্থী। জন হপকিন্স-রাইস ইউনিভার্সিটির মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের হেলথকেয়ার চ্যালেঞ্জে আমাদের উপস্থিতি এবং পুরস্কারপ্রাপ্তি এখন নিয়মিত।
থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার IEEE কম্পিটিশনে আমাদের বুয়েটিয়ানদের বানানো ড্রোন একের পর এক পুরস্কার জিতেছে। মার্স রোভারে চ্যালেঞ্জেও আমাদের দলের সাফল্য নিয়মিত। সবশেষ বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্টে উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে বুয়েটের এক স্টার্ট-আপ।
একই সাথে সিনিয়র-জুনিয়র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামিয়েছে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ফেস্ট, ডিপার্টমেন্টাল ডে- যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা আমাদের সহপাঠীরাও যথেষ্ট খুশি হয়েছে আমাদের আয়োজনে।
এই আয়োজন-অংশগ্রহণ সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র একটি নিরাপদ ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের কারণে। যেখানে হল রেসিডেন্ট কোনো ছাত্রের চিন্তায় থাকতে হয়নি যে হলে তাকে র্যাগের সম্মুখীন হতে হবে বা এটাচড কোনো শিক্ষার্থীরও উদ্বেগ ছিল না ক্যাম্পাসে এলে তাকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে-প্রাণে ধারণ করি
চিঠিতে বলা হয়েছে, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়ার পর থেকে আজ অবধি প্রতিটি জাতীয় দিবস সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে আসছি। আমরা ছাত্ররা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জাতীয় মূল্যবোধ ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনেপ্রাণে ধারণ করি।
দেশের গৌরবময় ইতিহাস, ত্যাগ-তিতিক্ষা আমরা অন্তরে লালন করি, ভবিষ্যতে পথচলায় অনুপ্রেরণা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয় মূল্যবোধ, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ আমাদের সকলের জন্যই প্রযোজ্য এবং একান্ত পালনীয়। আমরা সাংগঠনিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে এসেই এই সচেতনতা রাখি।
অথচ অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কতিপয় ব্যক্তি বা গণমাধ্যমের তৎপরতায় ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েট ক্যাম্পাসকে জাতীয় চেতনার বিরোধী মতাদর্শের স্থান হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত।
ক্যাম্পাসকে নিষিদ্ধ গোষ্ঠী থেকে নিরাপদ রাখতে সর্বদা তৎপর
আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের ব্যাপারে যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তাই দেশের যেকোনো স্থানের ন্যায় আমাদের ক্যাম্পাসকে আমরা অবশ্যই যেকোনো প্রকারের সন্ত্রাস, মৌলবাদ বা নিষিদ্ধ গোষ্ঠী থেকে নিরাপদ রাখতে সর্বদা তৎপর। সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেক মহল থেকেই বলা হচ্ছে যে, ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ মৌলবাদী বা সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রম বিদ্যমান এবং এর ফলশ্রুতিতেই তারা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চর্চার পক্ষে যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আপনাকে নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি যেকোনো মুহূর্তে এসব নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যেকোনো কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে চলমান দেখি শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব এবং প্রশাসনকে অবহিত করব। এমনকি ভবিষ্যতে যদি ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান দৃঢ়।
অকারণে জুলুম না হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ছাড়ি
বুয়েট ক্যাম্পাসে এই চার বছর আমরা নির্বিঘ্নে কাটিয়েছি। সেখানে ছায়া হয়ে ছিলেন আমাদের শিক্ষকেরা। আমাদের মতো দেশ জুড়ে লাখো শিক্ষার্থী এমন একটা ক্যাম্পাসের স্বপ্ন নিয়েই বাড়ি ছাড়ে- যেখানে তাদের ওপর অকারণে জুলুম হবে না, নির্যাতিত হতে হবে না, দিন-রাত কারো ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে না, বাবা-মাকে দুশ্চিন্তায় চোখের পানি ফেলতে হবে না। চার বছর আগে আপনার দৃঢ় এবং দ্রুত হস্তক্ষেপে আমরা নতুন করে এই ক্যাম্পাসে বাঁচতে শিখেছি।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এই ছোট্ট একটা চাওয়ার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি হুমকি, হচ্ছি লাঞ্ছিত, অপদস্থ। আমরা, আমাদের ছোট ভাইবোনেরা আরও একবার সেই অন্ধকার দিনগুলোর সাক্ষী হতে চাই না।
প্রধানমন্ত্রীকে পাশে থাকার আহ্বান
আমাদের মাননীয় উপাচার্য মহোদয় এবং আমাদের সকল শিক্ষকের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা জানি তারা তাদের সন্তানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট আছেন এবং থাকবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে সবিনয়ে অনুরোধ- আপনি আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনি সকল সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন, আমরা জানি এই দুর্দিনে আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বুয়েটের পড়াশোনার পরিবেশের গুরুত্ব, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বুয়েটের প্রকৌশলী এবং দক্ষ প্রযুক্তিবিদের গুরুত্ব বঙ্গবন্ধুর চিন্তায় প্রাধান্য পেয়েছে সবসময়। আপনারা সবাই জানেন দেশের জন্য এই সময়ে মেধাবী দক্ষ প্রকৌশলীর গুরুত্ব কতখানি।
আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখি, তারা তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার, কাঠামোগত উন্নয়নকে নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে বিশেষভাবে তাদের প্রকৌশলীদের সমৃদ্ধ করার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু বলতে ভীষণ কষ্ট হয়, অনেক কষ্টে পাওয়া সেই আকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীরা আজ ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসের থাবা থেকে নিজেকে রক্ষার যুদ্ধ করতে করতে জর্জরিত।
রাজনৈতিক কার্যক্রমে সময় দেয়া সম্ভব নয়
এই বিদ্যাপীঠে ঠিকমতো রুটিনমাফিক পড়াশোনা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করার পর কোনো ছাত্রের পক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সময় দেয়া সম্ভব নয়। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলছি, বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ এই ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীদের দিনের পর দিন রাস্তায় থাকার কথা নয়।
আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দেবো খুব শীঘ্রই। শেষ কয়েক বছর এই প্রত্যয় নিয়েই প্রতিটি প্রকৌশল বিভাগে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছি, ইতোমধ্যে যার ফলও পেতে শুরু করেছি। আমাদের এই পথচলা আপনিই নির্বিঘ্ন রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এই চিঠি। আমরা, আপনার হাজারো সন্তান আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে চাওয়া বঙ্গবন্ধুর অপমান
আমাদের চাওয়া, বুয়েটকে ঘিরে আমাদের জাতির জনকের যে ভিশন ছিলো, তাকে বাস্তবায়ন করা হোক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন বুয়েটের প্রকৃতি ভিন্ন। তাই তিনি নিজে রাজনীতির আওতা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাইরে রেখেছিলেন। আজ যখন তাঁরই গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বুয়েটের মতো বিশেষায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেকোনো মূল্যে রাজনীতির আওতায় আনার কথা বলে, আমরা বিশ্বাস করি তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও সিদ্ধান্তকে অপমান করা হয়।