অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি চালু করার আলটিমেটামের পাঁচ ঘণ্টা পর সংবাদ সম্মেলন করে বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা তাদের ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবিতে অটল আছেন। তারা বলেন, এই দাবি বুয়েটের সব ব্যাচের সব শিক্ষার্থীর।
রোববার বেলা সড়ে পাঁচটার দিকে বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা এ সব কথা বলেন। আন্দোলনরতদের পক্ষে তিন শিক্ষার্থী তাদের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তবে কেউই তাদের নাম প্রকাশ করেননি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না চাওয়া মানেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মতাদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়া নয়। আমরা শুধু চাই না, ক্ষমতার লোভ এবং অপচর্চা আবারও আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে না ফেলুক। আমরা সব শিক্ষার্থীই গর্বের সাথে আমাদের দেশপ্রেম, স্বাধীনতার চেতনার চর্চা আমাদের অন্তরে লালন করি।
গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে বহিরাগত নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতির বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশের ঘটনার পর থেকে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধে পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে নামেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এসব দাবিতে গত দুই দিন ধরে অবস্থান এবং রোববারসহ তিন দিন ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
পূর্বে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার অবস্থান কর্মসূচি পালন করার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, নিরাপত্তাজনিত তীব্র শঙ্কার কারণে আমরা কেউই কোনরুপ সমাগম করিনি। ক্যাম্পাসের আশপাশের সব এলাকায় শনিবার রাত থেকে ক্রমাগত মাইকিং, শিক্ষার্থীদের ফোন কলে হুমকি প্রদান, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানারকম গুজব, বুয়েট শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ট্যাগ দেয়া, শিক্ষার্থীদের ছবি নাম-পরিচয়সহ পোস্ট করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয় এমন অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বুয়েট ক্যাম্পাস এবং আশেপাশের এলাকা বর্তমানে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এমনকি বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরেও শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নিরাপত্তাজনিত এ সব কারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের রোববার ক্যাম্পাসে অবস্থান না নেয়া মানে এই নয় যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাস এর দাবি থেকে সরে এসেছে, এ দাবি বুয়েটের সব ব্যাচের সব শিক্ষার্থীর।
একজন ছাড়া টার্ম ফাইনাল দেননি কেউই
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করা বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, রোববার আমাদের ২০তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। এই পরীক্ষায় ক্যাম্পাসে কোনোরুপ অবস্থান, আন্দোলন বা বাধা ছাড়াই নিয়মিত এক হাজার ২১৫ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু একজন বাদে সব শিক্ষার্থীই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল। এ থেকেই শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কতটুকু সুদৃঢ় তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
রাজনীতি ছাড়াই নেতৃত্ব বিকাশের উপাদান আছে বুয়েটে
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, সুস্থ নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ব্যতীতও গত কয়েক বছরে উপস্থিত ছিল এবং এতে সুস্থ নেতৃত্বের চর্চায় শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে।
তারা বলেন,‘আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ক্ষমতা চর্চা ব্যতীত বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সভা-সেমিনার আয়োজন, সহশিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সফলভাবেই আয়োজিত হয়েছে।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছি, যেখানে ক্ষমতাচর্চার লোভ লালসার শিকলে আবারও জিম্মি হয়ে যাবে না সব নিরাপত্তা এবং শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ।
গবেষণামুখী কাজে মনোনিবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান বুয়েটে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ থাকায় নিজ নিজ প্রকৌশল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণামুখী কাজে মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্নাতক পর্যায়ের শেষ বর্ষে গবেষণা নিয়ে থিসিস এর কাজ থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীরা গবেষণামূলক কাজে যুক্ত হচ্ছে। একটি রাজনীতিবিহীন নিরাপদ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য সারা দেশব্যাপী জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং সমাদৃত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে দৃঢ় প্রত্যয়
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীলা বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের এবং স্বাধীনতার চেতনায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে অঙ্গীকার এবং প্রচেষ্টা তার সাথে বুয়েটের সকল শিক্ষার্থীরাই তাদের একাত্মতা পোষণ করে এবং নিজেদের সুযোগ্য প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে তোলে তার জন্য অবদান রাখতে উদ্যমী।