বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে দাবি করে এসবের বিরুদ্ধে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুয়েট সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেইজে রোববার ভোরে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
আন্দোলনরত ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী পারভেজ বলেন, পেইজটি তাদের প্রতিনিধিত্ব করে। বিজ্ঞপ্তিটি সত্য।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের অবস্থান কেবল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নয়। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থীরা যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ডের বিরোধী। এর আগে আমরা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির আর হিজবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানিয়েছি।
‘আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মনে প্রাণে ধারণ করি। জাতীয় দিনগুলোতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক উদযাপন ও অংশগ্রহণ এবং সম্যকভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিই এর প্রমাণ।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সম্প্রতি মিডিয়ায় বুয়েটের আন্দোলনরত বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা সাফ জানাচ্ছি, বুয়েটের বাইরে বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে না বরং তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে ওই দিন রাতে ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় নিয়ম অমান্য করে বুয়েটের ভেতরে রাজনৈতিক নেতাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে।’
বুয়েটে আবারও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই আন্দোলন করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের ৬ দফা দাবির, প্রথম দাবিতে যার কথা উল্লেখ করেছি, ইমতিয়াজ রাব্বি, সে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদপ্রাপ্ত এবং ইতিপূর্বে সে তার পদ সরিয়ে নেয়ার কথা দিলেও সেটি বাস্তবায়ন করেনি। তার সোশ্যাল মিডিয়ায় সে এ পরিচয় ব্যবহার করে।
‘সে এবং সংশ্লিষ্ট আরও ছাত্ররা যদি রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ক্ষমতা প্রদর্শন করে ক্যাম্পাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে পারে, তাহলে অতিসত্বর বুয়েটে সম্পূর্ণ গতিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা কেবল সময়ের ব্যাপার- এ আশঙ্কা থেকেই এ আন্দোলন।’
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বুয়েট যেমন সক্রিয়, অন্য রাজনৈতিক দল ও নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সক্রিয় নয়- এমন তথ্য ভুল উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এটাও মিথ্যা। ছাত্রদল যখন ২০২১ সালে আহ্বায়ক কমিটি দেয় তখন তীব্র আন্দোলন হয়, কিন্তু সেই কমিটির সবাই প্রাক্তন শিক্ষার্থী হওয়ায় কর্তৃপক্ষের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উপায় ছিল না।’
শিবির প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যেসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিবিরের কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগ আসছে তাদের ঘটনাটি বুয়েটের বাইরে হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এ ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই, তবে অভিযোগ আসার সাথে সাথে আমরা তাদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবার লিখিতভাবে আহ্বান জানিয়েছি এবং এটি আমাদের পূর্বের একটি আন্দোলনের অন্যতম দাবি হিসেবে ছিল।
‘সে সময়ে ইন্টারভাল ১৮-এর ফেইসবুক পেইজ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেয়া হয় যা বুয়েট সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেইজ থেকেও প্রচার করা হয়।’
শিক্ষার্থীরা জানান, আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার রায় সাপেক্ষে যদি কোনো শিক্ষার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাৎক্ষণিক তাদের বহিষ্কার এর দাবি জানানো হবে।
এ ছাড়া ছাত্রশিবিরের সাবেক প্রেসিডেন্ট যিনি দাবি করেছেন বুয়েটে তাদের কার্যক্রম আছে, তাকে প্রমাণসহ বুয়েটে শিবিরে যুক্তদের তালিকা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের তাৎক্ষণিক নিষিদ্ধ করার দাবি জানাবেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের চর্চা নিষিদ্ধ। কমিটি দেয়া ছাড়াও ক্যাম্পাসে শোডাউন, রাজনৈতিক সংগঠনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ যেখানে বুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ সেখানে রাত তিনটায় একটা রাজনৈতিক সংগঠনের নেতার দলেবলে প্রোগ্রাম করা অবশ্যই একটা অস্বাভাবিক ঘটনা এবং সাংগঠনিক রাজনীতির প্রভাবে ঘটা ঘটনা।’
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুয়েটের আভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে আমাদের স্বাতন্ত্র্যকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে কখনোই সম্মান করে নাই, বরং ২০২২ সালে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা বুয়েটে সমাবেশ/মিছিল করে হামলার হুমকি দেয়।’
ভুল প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা শপথ করছি সকল রাজনৈতিক ও নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে বুয়েটকে মুক্ত রাখার। আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।’