বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাবি সাংবাদিক সমিতির ইফতার এক করল ছাত্রলীগ-ছাত্রদলকে

  • প্রতিনিধি, ঢাবি   
  • ২৯ মার্চ, ২০২৪ ২২:২২

টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয়সহ সব দল-মতের শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্রদল-ছাত্রলীগ ও বাম সংগঠনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে গিয়ে কম হামলার শিকার হতে হয়নি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে। তবে শুক্রবার ছিলো ভিন্ন দিন। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের প্রায় ২০০ নেতাকর্মী প্রবেশ করলেও তারা কোনো বাধার মুখে পড়েননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) ইফতারে যোগ দিতে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন নির্বিঘ্নে।

এই ইফতার এক ছাদের নিচে এনেছে ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনকে। ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেই ফেললেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরই দায়িত্ব ছিলো এ ধরনের আয়োজন করার। আর সেই দায়িত্ব পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। এজন্য সাংবাদিক সমিতিকে ধন্যবাদ জানাই।’

ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভায় উপাচার্যসহ শিক্ষকবৃন্দ অংশ নেন। ছবি: নিউজবাংলা

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভা শুরু হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয়সহ সব দলমতের শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্রদল-ছাত্রলীগ ও বাম সংগঠনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

ইফতার-পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় ‘শিক্ষাঙ্গনে সংকট: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট লেখক, সমাজ বিশ্লেষক, রাষ্ট্রচিন্তক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন।

অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের মতানৈক্য দেখি। ক্যাম্পাসে তাদের সহাবস্থান সেভাবে লক্ষ্য করি না। তবে আজ ডুজার আয়োজনে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে আমরা এক ছাদের নিচে আনতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য একটা বিশেষ প্রাপ্তি।

‘ক্যাম্পাসে সবসময় রাজনৈতিক সহাবস্থান বিরাজ করুক, এটাই আমরা চাই। যাতে শিক্ষার্থীরা সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ পায়।’

আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল আয়োজনের জন্য ডুজার সদস্যবৃন্দসহ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘আমরা ডাকসু নির্বাচনকে অস্বীকার করি না। মাননীয় উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে কখন ডাকসু নির্বাচন দেয়া যায় তা বিবেচনায় নেয়া হবে।’

অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘এখানে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের সবার উপস্থিতি দেখে সত্যিই ভালো লাগছে। এটি আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্যিকার গণতান্ত্রিক চর্চার উদাহরণ।’

মূল আলোচনায় অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘১৯২১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল এবং পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে আরও পরিবর্তন আনা জরুরি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উন্নয়ন এবং নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ও শিক্ষার্থীদের অবাধ রাজনৈতিক চর্চায় ডাকসুর ভূমিকা রয়েছে। এটা শিক্ষার্থীদের অধিকারও। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্র রাজনীতিকে আরও স্মার্ট ও যুগোপযোগী করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ভায়োলেন্স অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।’

এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট, লাইব্রেরি সংকট ও অন্যান্য সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান।

ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রশাসনকে ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক সংগঠনের নিরাপদ ও অবাধ বিচরণের সুযোগ প্রদানের দাবি জানান। তিনি বলেন, ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে রাখা হয়েছে, যা আধুনিক যুগের ছাত্র রাজনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমরা চাই, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডাকসুর নির্বাচন যেন অতিসত্বর দেয়া হয়।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিউজ্জামান ফরিদ, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন, ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে ডুজা সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই তরুণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন যারা পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের লেখনীর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরছেন। এর সদস্যরা প্রত্যেকে মুক্তমনা, নিরপেক্ষ, অনুসন্ধানী মনোভাব ধারণ করে সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সফলতা, অর্জন ও নানা ইতিবাচক কর্মকাণ্ড দেশ-জাতির সামনে তুলে ধরেন। একইসঙ্গে সমাধানের উদ্দেশ্যে যৌক্তিক সমস্যাও তুলে ধরেন। আজকের এই অনুষ্ঠানে আমরা এক অনন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে পাচ্ছি। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দল-মত খুবই কাছাকাছি ও বন্ধুত্বপূর্ণভাবে অবস্থান করছেন। এটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনদের খুবই প্রত্যাশিত এক চিত্র। নিঃসন্দেহে এই শিক্ষাঙ্গনকে ঘিরে জাতির যে প্রত্যাশা সেটি আরও বাড়িয়ে দেবে।’

ইফতার-পূর্ব এই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান, নীল দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, হল প্রাধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ এবং সাংবাদিক সমিতির সাবেক সদস্য ও নেতৃবৃন্দ।

এছাড়া ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) রাগীব নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সায়েদুল হক নিশান, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর ঢাবি শাখার সাবেক আহ্বায়ক জাবির আহমেদ জুবেল, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব নাহিদ হাসানসহ সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর