আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
২৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপাচার্য এই আহ্বান জানান।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধের কালরাত্রির ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
শহিদদের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তা ছিল পরিকল্পিত।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি শাষকগোষ্ঠী বুঝে গিয়েছিল যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এদেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গণআন্দোলন গড়ে উঠবে এবং এই আন্দোলন তারা দমিয়ে রাখতে পারবে না।
উপাচার্য বলেন, এ কারণেই ২৫শে মার্চ রাতে হানাদার বাহিনীর অন্যতম টার্গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, রোকেয়া হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল (তৎকালীন ইকবাল হল), ঐতিহাসিক বটতলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে শান্তিপ্রিয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর নৃশংসতম গণহত্যা চালায়। এ ধরনের গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোনো দেশে কখনও ঘটেনি।
তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গণহত্যার স্বীকৃতি চাই। আমরা এই জন্য গণহত্যার স্বীকৃতি চাই যেন, এই গণহত্যার সাথে যারা জড়িত আছে তারা ভবিষ্যতে সাবধান হয়ে যায়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে গণহত্যার সাথে জড়িতরা উপলব্ধি করতে পারবে, ভবিষ্যতে এমন মানবতার বিরুদ্ধে কাজ করলে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
উপাচার্য আরও বলেন, পাকিস্থানে সাম্প্রতিক সময়ে একটি বই প্রকাশ হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশের এই গণহত্যাকে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। আমাদের দেশেও সেই পাকিস্তানের মত করে কিছু কিছু রাজনৈতিক দল কথা বলে। এটি ইতিহাসের বিকৃতি। এটি শহীদদের প্রতি অবমাননা।
উপাচার্য বলেন, এ দেশে রাজনীতি করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতি করতে হবে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানাই।
উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা এদেশের মানুষের ওপর যে নিষ্ঠুর, নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার অন্যতম স্বাক্ষী।
এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্যে দিয়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি তার ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে আলোচনা সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল-এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জগন্নাথ হল গণসমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বলন ও শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জগন্নাথ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা উপস্থিত ছিলেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাত এগারোটা থেকে এগারোটা এক মিনিট পর্যন্ত জরুরি স্থাপনা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল জায়গায় এক মিনিট ব্লাক-আউট কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ ছাড়া, গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে বাদ জোহর মসজিদুল জামিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার মসজিদগুলোতে এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে শহিদদের রুহের মাগফেরাত/শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।