বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফাঁকা বাসায় ঢুকে ছাত্রীর ওপর ‘ঝাঁপ’, কমিটি হলেও পদক্ষেপ নেই

  •    
  • ১৭ মার্চ, ২০২৪ ১৭:১৮

অভিযুক্ত রকিবুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের প্রভাষক। যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তোলা ওই ছাত্রী বাংলা বিভাগে পড়ছেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও হেনস্তার ঘটনায় দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করার রেশ কাটতে না কাটতেই আরও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ সামনে এসেছে।

গত বছরের ২৮ অক্টোরের ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রী উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও প্রতিবেদন জমা হয়নি এখনও।

অভিযুক্ত রকিবুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের প্রভাষক। যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তোলা ওই ছাত্রী বাংলা বিভাগে পড়ছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের একটি ভবনের চার তলার ফ্ল্যাটে ওই ছাত্রী আরেক জুনিয়র ছাত্রীকে নিয়ে থাকেন। ভবনটির তিন তলায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন শিক্ষক রকিবুজ্জামান।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর পূজার ছুটিতে ভবনটিতে ভাড়া থাকা প্রায় সবাই বাড়িতে চলে যান। কিছুদিন পর সেমিস্টার পরীক্ষা তাই পড়াশোনা করতে বাড়িতে যাননি ওই ছাত্রী। ওইদিন সকাল ৯টার দিকে কক্ষের টেবিলে বসে পড়ছিলেন ওই ছাত্রী। এ সময় সঙ্গে থাকা জুনিয়র ছাত্রী স্থানীয় বাজারে এক কোচিংয়ে ক্লাস নিতে চলে যান। হুট করে শিক্ষক রকিবুজ্জামান তার কক্ষে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেন।

অভিযোগে বলা হয়, শিক্ষক এভাবে কক্ষে প্রবেশ করবেন ভাবতেও পারেনি ওই ছাত্রী। রকিবুজ্জামান ঢুকেই চারদিকে ঘুরপাক করতে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রীকে বলতে থাকেন- ‘তোমার বাড়ি যেন কোথায়? তুমি কোন বিভাগে পড়? তোমার বাসায় বুয়া আসে? তোমার মাসে কত টাকা খরচ হয়? তুমিতো বেশ গোছালো, দেখে মনে হয় বাড়ির মতো বাসাটা সাজিয়ে রাখো।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, এর পর ওই শিক্ষক বলেন, ‘ছাদে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দরজা খোলা দেখে চলে আসছি। আমি চলে যাচ্ছি’- এই বলে ছাত্রীর ওপর ঝাপিয়ে পড়েন শিক্ষক। এ সময় বলতে থাকেন- ‘তুমিতো অনেক সুন্দর, অনেক গোছালো। আমি তোমাকে অনেকদিন ধরে নজরে রেখেছি। তুমি কিছু মনে করছো না তো? কিছু মনে করো না প্লিজ।’ এ সময় কান্না করতে থাকেন ছাত্রী। এক পর্যায়ে শিক্ষক তাকে ছেড়ে দিয়ে কক্ষ থেকে চলে যান।

শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তাৎক্ষণিক অভিযোগ না দিয়ে পরে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষক রকিবুজ্জামান কক্ষ থেকে চলে যাওয়ার পর ঘটনাটি বিভাগের ড. তারানা নূপুর ম্যাডামসহ এক বড় আপুকেও জানাই। কিন্তু লজ্জার ভয়ে বাবা-মাকে জানাইনি৷ সামনে পরীক্ষা, তারা জানলে হয়ত আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দেবে। এলাকার লোকজন হয়ত বলবে মেয়েরই দোষ। তাই চুপচাপ ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে আমি সবসময় চিন্তিত ছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, আর গোপন রাখা ঠিক হবে না। এদিকে আমার সেমিস্টার পরীক্ষাও শেষ হয়ে যায়। পরে ৫ ডিসেম্বর উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দিই৷’

এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘অভিযোগের পর পরই তদন্ত কমিটি গঠন হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও হেনস্তার ঘটনায় দুই শিক্ষককে বহিষ্কার করার পর আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়ার ঘটনার আবারও বিচার চাইলে রকিবুজ্জামান আরও বেশি ভয় পেয়ে যায়। এখন সে নিজেকে ভালো মানুষ প্রমাণ করতে নানাভাবে চেষ্টা করছে। তার কাছের বিভিন্ন ছাত্রকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে খারাপ স্ট্যাটাস দেয়াচ্ছে। আমাকে খারাপ মেয়ে প্রমাণ করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রী হয়ে আমার শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলবো কেন? এতে তো শিক্ষকের পাশাপাশি আমারও মান সম্মান নষ্ট হচ্ছে। তবুও আমি চাচ্ছি, শিক্ষক হলেও সে বিচারের আওতায় আসুক। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারসহ তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না আনলে আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হব। কারণ ঘটনাটি নিয়ে আমি চরম লজ্জিত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের প্রভাষক রকিবুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তোলা হয়েছে। এটি ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ। আমি মেয়েটিকে ভালো করে চিনিও না। আশা করছি তদন্ত প্রতিবেদনে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব। এরপর যে মেয়েটি আমার মানসম্মান নষ্ট করতে চেয়েছে, তাকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন-নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি, তদন্ত কমিটির প্রধান ও সংগীত বিভাগের অধ্যাপক মুশাররাত শবনম বলেন, অভিযোগের পর ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

এ বিষয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘তদন্ত কমিটিকে কয়েকদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মিললে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিলে ভুল করবে। আমি নিজে তাকে বুঝিয়ে বলবো- নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেবে তদন্ত কমিটি।’

এদিকে সম্প্রতি অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক ছাত্রীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় জরিমানা আদায়, নম্বর কম দেয়া ও থিসিস পেপার আটকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে মানবসম্পদ ও ব্যাবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার দাবিতে গত ৪ মার্চ আন্দোলন শুরু করেন অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করা ওই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ট্রেজারার ড. আতাউর রহমানকে প্রধান করে ৫ মার্চ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটি গঠনের একদিন পর ৬ মার্চ আন্দোলনকারীরা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় তারা ওই বিভাগের শিক্ষকদের নেমপ্লেটসহ ভাঙচুর করে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে যৌন হয়রানির ঘটনায় প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ তুলে তাকেও তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানান। পরে দাবি মেনে তদন্ত কমিটি পুর্নগঠন করে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকেও তদন্তের আওতায় নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪তম বিশেষ সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে স্থায়ী বহিষ্কার ও একই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর