শনিবার বেলা একটা। হঠাৎ করে সাইরেন বাজিয়ে একটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়ায় কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার অরণী ভিলার সামনে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা সবার চোখ মুখ ছলছল করে উঠল। অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন সহপাঠিরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরোজ সাদাত অবন্তিকার মরদেহ তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর এমনই এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় তার মরদেহ। এরপর বিকেল ৩টায় কুমিল্লা সরকারি কলেজ মাঠে অবন্তিকার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শাসনগাছায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশেই দাফন করা হয় তাকে।
শুক্রবার রাত ১১টায় সহপাঠী ও প্রক্টরকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন জবির আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফাইরোজ সাদাফ অবন্তিকা। স্বজনরা খবর পেয়ে দরজা খুলে তাকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের নৈশকালীন চিকিৎসক জোবায়ের আহমেদ তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
শনিবার সকাল থেকে স্বজনরা ভিড় করেন অরণী ভিলায়। সেখানে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনমকে সান্তনা দেন তারা। তবে কোনো সান্তনাই প্রবোধ দিতে পারছিল না সন্তানহারা গৃহবধূ তাহমিনা শবনমকে।
অবন্তিকার একমাত্র ভাই জারিফ জিয়াউল অপূর্ব এবার কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বোনের মৃত্যুর খবরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে সে। বোনের মরদেহ রেখে তার আর পরীক্ষার হলে যাওয়া হয়নি।
অবন্তিকা কুমিল্লা ও ঢাকায় সমানতালে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তার সহপাঠী ও সংস্কৃতিক অঙ্গনের সহযোগীরাও তাকে হারিয়ে ব্যাথিত।
কুমিল্লার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রঙতুলির প্রতিষ্ঠাতা সাইফ বাবু কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘এমন ভালো মেয়ে আর হয় না। যারা তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর বিচার দাবি করছি আমি।’
শনিবার বেলা ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসযোগে কুমিল্লা ছুটে আসেন অবন্তিকার সহপাঠীরা। অবন্তিকার মাকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।
ময়নাতদন্ত শেষে এদিন দুপুর ১টার দিকে অবন্তিকার মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মেয়ের মরদেহ দেখে জ্ঞান হারান মা তাহমিনা শবনম।
মেয়ে হারিয়ে রাতভর কেঁদেছেন তার মা। গত বছর দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগে মারা যান অবন্তিকার বাবা কুমিল্লা সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক প্রফেসর জামাল হোসেন। ওই ঘটনার এক বছরের মধ্যে মেয়েকেও হারালেন তাহমিনা শবনম।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় এসেছিল। সোমবার ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তার। তার সব পথ বন্ধ করে দেয় ওই প্রক্টর ও তার সহপাঠী।
‘আমরা বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আমি আমার মেয়ের আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’