ফেসবুক ভিডিওতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন এবং গণমাধ্যমকর্মীদের গালাগাল করায় এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। আর পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৬০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের সভার সুপারিশ অনুযায়ী রোববার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক সভায় বহিষ্কারের এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে তৈরি করা একটি ভিডিওতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং গণমাধ্যমকর্মীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী মো. আব্দুল ওহেদ ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী।
এছাড়া শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন- মৃৎশিল্প বিভাগের জাহিদ শেখ ও মো. শাহরিন ইসলাম, ফলিত গণিত বিভাগের মো. আযহা ইসলাম, সংগীত বিভাগের মর্তুজা হাসান খান, ইতিহাস বিভাগের মো. আজিম মাহমুদ তওসিফ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মো. রিয়াদ মাল।
জাহিদ শেখ ও মো. শাহরিন ইসলাম শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে আটক রেখে ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন এবং মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের নামে লালবাগ থানায় মামলা করেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে মো. আযহা ইসলাম, মর্তুজা হাসান খান, আজিম মাহমুদ তওসিফ এবং মো. রিয়াদ মাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনে ঘুরতে আসা দুই দর্শনার্থীর গতিরোধ করে এলোপাতাড়ি মারধর করে ৫ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শাহবাগ থানায় মামলা করেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত এই চার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি সংশ্লিষ্ট থানা, শিক্ষার্থীর স্থানীয় অভিভাবক এবং স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হবে। বহিষ্কৃত এই ৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কারাদেশ চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান করতে পারবেন না। তাদের অপরাধের জন্য ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না’ মর্মে কারণ দর্শানো এবং ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া ক্যাম্পাসে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রক্টর অফিসের মো. শামীম হোসেনকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রমাণিত হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আর পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কৃত ৬০ শিক্ষার্থীর মধ্যে দু’জনকে পরীক্ষাসহ তিন সেমিস্টার, ৪০জনকে পরীক্ষাসহ দুই সেমিস্টার এবং ১৮জনকে পরীক্ষাসহ ১ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
সিন্ডিকেট সভায় উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারসহ সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।