রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। এই ভর্তিযুদ্ধ চলবে ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে ইতোমধ্যে ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। শুধু ক্যাম্পাস নয়, নগরী জুড়েই সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন এক ধরনের আবহ। হোটেল-মোটেলগুলোতে কোনো কক্ষ ফাঁকা নেই। শহরের বাসিন্দাদেরও প্রায় সবার ঘরে ভর্তিচ্ছু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে অতিথি হয়েছেন অভিভাবকরা।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় সব ধরনের জালিয়াতি ঠেকাতে তৎপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সজাগ রয়েছে।
রাবি’র জনসংযোগ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিনে আজ চার শিফটে সি ইউনিটের বিজ্ঞান গ্রুপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত গ্রুপ-১ এর রোল ৩১০০০১ থেকে ৩২৮৬৪৪; বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত গ্রুপ-২ এর রোল ৩৩০০০১ থেকে ৩৪৮৬৪৪; দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত গ্রুপ-৩ এর রোল ৩৫০০০১ থেকে ৩৬৮৬৪৪ এবং বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত গ্রুপ-৪ এর রোল ৩৭০০০১ থেকে ৩৮৮৬৪৫ এর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে ভবনগুলোর গেট এবং ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কক্ষের দরজা খুলে দেয়া হবে। এবার এক ঘণ্টাব্যাপী ভর্তি-পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে নেয়া হচ্ছে। পরীক্ষা চলাকালে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কক্ষের বাইরে যেতে পারবেন না। পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন ও ক্যালকুলেটরসহ মেমোরিযুক্ত অন্য কোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নেয়া যাবে না।
রাবির জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে জানান, ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহযোগিতা প্রদানের জন্য ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সহজগম্য স্থানে ১২টি হেল্প ডেস্ক-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিভাবকদের অবস্থানের জন্য প্রতিটিতে ২০০ আসনবিশিষ্ট ১১টি টেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বসার জন্য নির্দিষ্ট টেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে খাবার পানি ও চিকিৎসা সুবিধারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়াও পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন আবাসিক হলে ও বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়ামে সীমিত আকারে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনোরূপ হয়রানি ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড এবং দোকানগুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। খাবারের মান বজায় রাখার স্বার্থে ভোক্তা অধিদপ্তরের ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত থাকবে।
পরীক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো রকম গুজবের (সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলেও) বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ক্যাম্পাসের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো, এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘এ বছর ৪ হাজার ৪৩৮টি আসনের বিপরীতে মোট ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮০টি চূড়ান্ত আবেদন জমা পড়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় কোনো ধরনের জালিয়াতি বা কারসাজির সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদা সজাগ রয়েছে।’
উপাচার্য জানান, ক্যাম্পাস ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের বিশেষ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু থাকবে।
পরীক্ষা চলাকালে রাবি চিকিৎসা কেন্দ্র পরিচালিত একটি মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। সার্বক্ষণিকভাবে চারটি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে।
এছাড়া কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিচালিত দুই সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম এবং দুটি অ্যাম্বুলেন্স চিকিৎসা সহায়তা দেবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং ২ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিমও কাজ করবে।