নতুন করে দুইদিন সময় না বাড়ানো হলে বৃহস্পতিবারই হতো অমর একুশে বইমেলার শেষদিন। তবে সময় বাড়ানোয় আরও দুদিন চলবে বইমেলা। ইতোমধ্যে সব বই মেলায় চলে এসেছে। ফলে শেষ সময়ে এসে পাঠকরা সহজেই খুঁজে নিতে পারছেন তাদের পছন্দের বই।
বইমেলায় নবীন ও তরুণ জনপ্রিয় লেখকদের বই বিক্রির শীর্ষে থাকলেও হারিয়ে যাননি কিংবদন্তি লেখকরা। তরুণ জনপ্রিয় লেখকের ভীড়ে ভালো বিক্রি হচ্ছে তাদের বইও।
এবারের বইমেলায় কোন বইগুলো সবচেয়ে ভালো বিক্রি হয়েছে- জানতে চাইলে প্রথমা প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান বলেন, “সর্বোচ্চ বিক্রিত তিনটি বইয়ের নাম বলতে বললে যে তিনটি বইয়ের নাম আসবে, সেগুলো হলো- আনিসুল হক স্যারের ‘কখনো আমার মাকে’, আসিফ নজরুল স্যারের ‘আমি আবু বকর বলছি’, আনু মোহাম্মদ স্যারের ‘অর্থশাস্ত্র’ বইটি।
“এছাড়া আরও দুইটি বইয়ের নাম বলা যাবে, মহিউদ্দিন আহমেদ স্যারের ‘প্লাবনভূমির মহাকাব্য পলাশী থেকে পাকিস্তান’ এবং জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী স্যারের ‘দুই জেনারেলের হত্যাকাণ্ড’।”
তিনি জানান, ‘দুই জেনারেলের হত্যাকাণ্ড’৭/৮ দিন আগে বইমেলায় এসেছে। এরই মধ্যে তিনবার স্টক আউটও হয়ে গেছে।
অন্বেষা প্রকাশনীর কর্মী আবদুল্লাহ বলেন, “ড. আমিনুল ইসলাম স্যারের ‘১০১ ইনট্রোডাকশন টু বাংলাদেশ’, ইসমত আর প্রিয়ার ‘আমার শুধু মানুষ হারায়’, সুজন দেবনাথের ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’, আরিফুর রহমানের ‘সাউদার্ন ভ্যালি ওয়ে’ আর জুনায়েদ ইসলামের ‘ক্রিমসন অ্যান্ড দ্য রেড ডোর’ সবচেয়ে ভালো বিক্রি হচ্ছে।”
মিজান পাবলিশার্সের বিক্রয়কর্মী ইমন বলেন, “নিমাই ভট্টাচার্যের ‘মেমসাহেব’, ফারজানা ছবির ‘জলছবি’ আর অভিনেত্রী রওনক বিশাখা শ্যামলীর ‘তুমি নয়নতারা’ বইগুলো সবচেয়ে ভালো বিক্রি হয়েছে।”
‘তুমি নয়নতারা’ বইয়ের স্টক শেষ হয়ে যাওয়া এবং মেলা বর্তমানে শেষ পর্যায়ে হওয়াতে প্রকাশনী নতুন কোনো মুদ্রণে যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
অন্যপ্রকাশ প্রকাশনীর পরিচালক সিরাজুল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘সবচেয়ে বিক্রিত বইগুলোর নির্দিষ্ট নাম না বলি। তবে উপন্যাসের কাটতি বেশি। আর কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদের বই তো আছেই। এছাড়া সাদাত হোসাইন, মৌরি মরিয়মসহ আরও যেসব লেখক ফেসবুকে পজিটিভ লেখালেখি করেন, তাদের বই ভালো বিক্রি হচ্ছে।’
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স-এর বিক্রয় প্রতিনিধি শারাফাত লস্কর বলেন, “অরুণ কুমার বিশ্বাসের ‘ব্রাউন পেপার’, দন্ত্যস রওশনের ‘নির্বাচিত কিশোর উপন্যাস’‘, মশিউর রহমান শান্তর ‘ঘোর’, ড. মোহাম্মদ আমীন স্যারের ‘যতিচিহ্নের গতি-প্রকৃতি’, সাগরিকা নাসরিনের ‘আধখানা বসতি তাহার’ এবং আবদুল গাফফার রনির ‘প্যারাডক্স’ বইগুলো আমাদের প্রকাশনী থেকে ভালো বিক্রি হচ্ছে।”
মাওলা ব্রাদার্সের মারিহা বিনতে আলী বলেন, “আমাদের প্রকাশনীর সব বই ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’, ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’, উপন্যাসসমগ্র, শাহাদুজ্জামানের ‘ক্রাচের কর্ণেল’ ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ বেশি বিক্রি হচ্ছে।”
ঐতিহ্য প্রকাশনীর এক বিক্রয়কর্মী বলেন, “আফতাব হোসেনের ‘বখতিয়ার’, ইফতেখার আমিনের অনুবাদ বই ‘ট্রাভেলস অব ইবনে বতুতা’, সাব্বির জাদিদের ‘আজাদির সন্তান’, মহিউদ্দিন আহমদের ‘চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ’ আর ‘তেহাত্তরের নির্বাচন’ বইগুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে।”
বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই রাখার দাবি
আগামী বছর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে বইমেলা হবে না মর্মে একটি গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।
বলা হচ্ছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তৈরির অংশ হিসেবে কিছু প্রকল্পের কাজ মার্চ মাস থেকেই শুরু করতে চাইছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে পূর্বাচলে নিয়ে যাওয়া হবে বইমেলা।
যদিও মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো ঘোষণা আসেনি, তবে প্রকাশকদের দাবি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ থেকে বইমেলা যেন না সরানো হয়। সরানো হলে বইমেলা না হওয়ারই নামান্তর সেটি।
এ বিষয়ে অন্বেষা প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী ফাতিমা বুলবুল বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা আমাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির অংশ। এর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ পুরো এলাকা জড়িয়ে আছে।
‘শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সবাই বইমেলায় আসে। এখানে বইমেলা হওয়ায় আলাদা একটি আবহ অনুভূত হয়। তাই বইমেলার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিকল্প কোনো জায়গা থাকতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘বইমেলায় অন্যত্র সরিয়ে নিলে মেলার প্রাণটাই থাকবে না। তার চেয়ে বইমেলা না হওয়াই ভালো। বইমেলাকে তো আর বাণিজ্যমেলার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না।’
বইমেলায় কবি সামাদের ‘সিলেক্টেড পোয়েমস’
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে দেশবরেণ্য কবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের নতুন বই ‘সিলেক্টেড পোয়েমস’-এর তৃতীয় সংস্করণ। এবারের মেলায় অনন্য এ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে অন্যন্যা প্রকাশনী। উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরীর চিত্রকর্ম অবলম্বনে বইয়ের প্রচ্ছদ অংকন করেছেন খ্যাতিমান শিল্পী ধ্রুব এষ।
দ্বিভাষিক এই কাব্য সংকলনটি ইংরেজি ভার্সন নতুন করে সম্পাদনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত দুই কবি জেমি প্রক্টর শু এবং সাইমন জে অর্টিজ। আগের সংস্করণের সঙ্গে তিরিশটি নতুন অনুবাদ যুক্ত করা হয়েছে বর্তমান সংস্করণে।
কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য অধ্যাপক সামাদ ২০২৪ সালে একুশে পদক, ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। জাতীয় কবিতা পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ সামাদ ২০১৭ সাল থেকে পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন।
২৯তম দিনে ১২৭টি নতুন বই
বইমেলার ২৯তম দিনে নতুন বই এসেছে ১২৭টি।
‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক ও আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন, পুঁথিগবেষক জালাল খান ইউসুফী, কথাসাহিত্যিক মাহমুদুন নবী রনি এবং কবি রনি রেজা।
শুক্রবারের কর্মসূচি
শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার ৩০তম দিন। মেলা শুরু হবে সকাল এগারোটায় এবং চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।