বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রাণের মেলায় অপ্রতুল ভাষা আন্দোলনের ওপর বই

  •    
  • ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২২:৩৩

অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে আমরা অনেক কাজ করতে চাই, কিন্তু এসব বিষয়ে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাণ্ডুলিপি পাই না। ভাষা আন্দোলনের ওপর পাণ্ডুলিপি নেই বললেই চলে।’

সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরসহ ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া একুশে বইমেলা চলে ফেব্রুয়ারির পুরো মাসজুড়ে। এবারের বইমেলায় প্রতিদিন প্রায় শ’ খানেক বই প্রকাশিত হলেও যাদের আন্দোলন এবং রক্তের বিনিময়ে আমরা এই ভাষা পেয়েছি সেই ভাষা আন্দোলন এবং ভাষা শহীদদের নেয়া লেখা বই প্রকাশ হচ্ছে না বললেই চলে।

প্রকাশকেরা বলছেন, এসব বিষয়ে তারা বই প্রকাশে আগ্রহী, কিন্তু ভালো পাণ্ডুলিপি পাচ্ছেন না।

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, মঙ্গলবার মেলার ২০তম দিনে দুই হাজার ৯৫টি বই প্রকাশতি হলেও তার মধ্যে ভাষা আন্দোলনের ওপর নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে মাত্র চারটি। এর মধ্যে দুইটি বই প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য প্রকাশনী, একটি বই প্রথমা প্রকাশনী এবং ঝিঙেফুল প্রকাশনী প্রকাশ করেছে আরেকটি বই। এছাড়া ভাষা আন্দোলনের ওপর আরও তিনটি বই মেলায় নিয়ে আসার কথা জানিয়েছে ঐতিহ্য।

বাংলা একাডেমি থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মেলায় ভাষা আন্দোলনের ওপর আসা নতুন চারটি বই হলো- ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত লেখক-গবেষক বদরুদ্দোজা হারুনের লেখা ‘ভাষাশহিদ আবুল বরকত: নেপথ্যকথা’, প্রয়াত কবি বেলাল চৌধুরীর অমর একুশ বিষয়ক স্মৃতি ও ভাবনার সংকলন ‘একুশের স্মৃতি ও ভাবনা’, প্রথমা থেকে প্রকাশিত ভাষা সৈনিক মর্তুজা বশীরের লেখা ‘একুশের লেখা, একুশের আঁকা’ এবং ঝিঙেফুল থেকে প্রকাশিত গাজী হানিফের ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।

একুশ নিয়ে লেখা বইয়ের অপ্রতুলতা নিয়ে আক্ষেপ ঝরল বিভিন্ন প্যাভিলিয়নের বিক্রয় প্রতিনিধিদের কণ্ঠেও।

বাংলা একাডেমির বিক্রয়কর্মী লাভলু আলম বলেন, ‘এ বছর ভাষা আন্দোলন নিয়ে বাংলা একাডেমির নতুন কোনো বই নেই। আগের বইগুলোই পুনরায় প্রিন্ট করা হচ্ছে।’

বাংলা একাডেমির স্টলঘুরে অমর একুশ নিয়ে কয়েকটি বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো হচ্ছে- ড. সরকার আমিনের সম্পাদনায় ‘একুশের প্রবন্ধ ২০২৩’, সাজ্জাদ আরেফিনের সম্পাদনায় ‘একুশের কবিতা-পরিচয়’, জালাল ফিরোজের ‘অমর একুশে বইমেলার ইতিহাস’ ও আমিনুর রহমান সুলতানের ‘ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক’।

অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে আমরা অনেক কাজ করতে চাই, কিন্তু এসব বিষয়ে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাণ্ডুলিপি পাই না। ভাষা আন্দোলনের ওপর পাণ্ডুলিপি নেই বললেই চলে।

‘অনেক বছর আগে হয়ত দুই একটা হয়েছে, কিন্তু পরবর্তীতে গবেষণার অভাবে আমরা কোনো পাণ্ডুলিপি পাচ্ছি না। হয়ত গবেষকরা এসব বিষয়ে উৎসাহ পাচ্ছেন না অথবা বিভিন্ন কারণে লিখছেন না। এসব কারণে আমরা এ বিষয়ে কোনো বইও প্রকাশ করতে পারছি না।’

তিনি বলেন, “প্রতিবছরই আমাদের ইচ্ছা থাকে ভাষা আন্দোলনের ওপর কমপক্ষে একটা বই প্রকাশ করার, কিন্তু পাণ্ডুলিপি না পাওয়ার কারণে সেটি আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। পুরাতন যে বইগুলো আছে, সেগুলো নিয়েই আমাদের চলতে হয়। বর্তমানে আমাদের ডা. শেখ মেহেদী হাসানের ‘ভাষা আন্দোলনের পূর্বাপর’ বইটি আছে।”

পাঠক সমাবেশের স্টল ম্যানেজার লিয়ন বলেন, ‘এই বিষয় নিয়ে নতুন কোনো বই আসেনি। আগেরও কোনো বইও আমাদের নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই আছে।’

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) বিক্রয় প্রতিনিধি মোসাদ্দেক হোসাইন বলেন, “নতুন কোনো বই আসেনি। তবে আতিউর রহমান স্যারের সম্পাদনায় ‘ভাষা আন্দোলনের আত্ম সামাজিক পটভূমি’ শীর্ষক একটি বই ছিল। তবে সেটা এখন নেই। নতুন করে আবার প্রকাশিত হবে।”

প্রথমা প্রকাশনীর বিক্রিয় প্রতিনিধি আশফাক বলেন, “একটা ছাড়া আর কোনো নতুন বই আসেনি। তবে আগের কিছু বই আছে, সেগুলো হচ্ছে- আহমদ রফিকের ‘ভাষা আন্দোলন’, ‘একুশের মুহুর্তগুলো’, ছয় ভাষাশহীদের জীবনগাথা নিয়ে বই ‘একুশের শহীদ’, মতিউর রহমানের সম্পাদনায় ‘একুশের পটভূমি একুশের স্মৃতি’ ইত্যাদি।”

মওলা ব্রাদার্সের স্টল ম্যানেজার তামিম বলেন, “‘ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর নামে’ একটি বই ছিল, সেটা গত বইমেলায় শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে রিপ্রিন্ট করা হয়নি। তবে এই বছর নতুন কোনো বই আসেনি।”

ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মেহেদী হাসান রিফাত বলেন, “ভাষা আন্দোলনের ওপর নতুন আরও তিনটা বই আসবে। সেগুলো হলো- অমর একুশে স্মরণে ‘একুশের ২১ গল্প’, ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলার বরেণ্য কথাশিল্পীদের একুশটি গল্পের এ সংকলন সম্পাদনা করেছেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। এছাড়াও ভাষা আন্দোলনের দুই অগ্রসৈনিক শহীদ মুনীর চৌধুরীর ‘দুষ্প্রাপ্য রচনা’ এবং ‘শহীদ জহির রায়হানের আত্মকথা ও অন্যান্য রচনা’। এই দুটি গ্রন্থের সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন কাজী জাহিদুল হক।”

“এছাড়া আগের কিছু বই, যেমন: সৈয়দ শামসুল হকের ‘বাহান্নের বিজয়গাথা’, মো. নূরুল আনোয়ারের একুশের গুলিবর্ষণ, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর কারিশমা’ও রয়েছ ‘, যোগ করেন মেহেদী হাসান রিফাত।

তবে আগামী প্রকাশনী থেকে এই বছর ভাষা আন্দোলন সংশ্লিষ্ট নতুন কোন বই পাওয়া না গেলেও আগের কিছু বইয়ের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো- ড. এম আবদুল আলীমের ‘ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ- কতিপয় দলিল’, ‘ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিব- কতিপয় দলিল’, ‘রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনে রফিকুল ইসলাম’, ‘সিরাজগঞ্জে ভাষা আন্দোলন’, ‘আওয়ামী লীগ ও ভাষা আন্দোলন’, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’, বশির আল হেলালের ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’ উল্লেখযোগ্য।

সময় প্রকাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি আবির হাসান বলেন, “আমাদের নতুন কোন বই আসেনি। তবে আগের তিনটা বই আছে। সেগুলো হলো, আহমদ রফিকের ‘ভাষা আন্দোলন- ইতিহাস ও উত্তরপ্রভাব’, হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ এবং মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’।”

এছাড়া সেলিনা হোসেনের ‘যাপিত জীবন’, জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’, আনিসুর হকের ‘যারা ভোর এনেছিলো’, বদরুদ্দীন উমরের ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি-১’, এম আর আখতার মুকুলের ‘একুশের দলিল’, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা’, হুমায়ুন আজাদের ‘ভাষা আন্দোলন’, রফিকুল ইসলামের ‘ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনার’, মুহাম্মদ শফীর ‘ভাষা আন্দোলনের আগে ও পরে’ এবং আহমদ রফিকের ‘ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ও কিছু জিজ্ঞাসা’ বইগুলো উল্লেখযোগ্য।

২০তম দিনে নতুন বই ৯৯টি

মঙ্গলবার মেলা শুরু হয় বিকেল তিনটায় এবং চলে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ৯৯টি।

বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: জামাল নজরুল ইসলাম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানবক্তা আসিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুব্রত বড়ুয়া এবং আরশাদ মোমেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গাণিতিক, পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিশ্ববরেণ্য কসমোলজিস্ট। আন্তর্জাতিক মহলে তিনি জে. এন. ইসলাম হিসেবে পরিচিত।’

আলোচকবৃন্দ বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের বিজ্ঞানচিন্তা ও গবেষণার পরিসর ছিল অনেক বিস্তৃত। তিনি আন্তর্জাতিক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলে বিশিষ্ট অবস্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি কেবল বড়ো বিজ্ঞানীই ছিলেন না, একজন সংস্কৃতিবান ও দেশপ্রেমিক মানুষও ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম বড়ো বিজ্ঞানী হয়েও ছিলেন নিরহংকারী, অত্যন্ত আন্তরিক, সদাশয় ও সরল মনের অধিকারী একজন মানুষ। তিনি বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।’

‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আতাহার খান, কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল, গবেষক চৌধুরী শহীদ কাদের এবং লেখক ও পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল।

অমর একুশের কর্মসূচি

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। তারপরই শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। রাত সাড়ে বারোটায় একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে।

আগামীকাল বইমেলা শুরু হবে সকাল আটটায় এবং চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।

সকাল আটটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি শামীম আজাদ।

অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৪

বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৪। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করবেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

এ বিভাগের আরো খবর