ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য তাকে তিন মাসের ছুটি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার বিকেলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন-১) জিএম মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই তথ্য জানানো হয়।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিজ কার্যালয়ের সামনে এই চিঠি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পড়ে শোনান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ৷
এর আগে অধ্যাপক নাদির জুনাইদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করায় তাদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। আমি চাই না, আমার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় কোনো ক্ষতি হোক। তাই আমি নিজ থেকেই আর ক্লাসে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এদিকে রেজিস্ট্রার দপ্তরের চিঠি উদ্ধৃত করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষার্থীদের রোববারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে আপনাকে (অধ্যাপক নাদির জুনাইদ) সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য আজ থেকে তিন মাসের জন্য ছুটি দেয়া হলো৷
‘আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের যথাযথ অনুসন্ধান ও তদন্ত করার জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’
এর আগে সোমবার সকাল থেকে বিভাগের শিক্ষার্থীরা তিন দাবিতে বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। একইসঙ্গে তারা দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করা; অপরাধারীকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা; তদন্ত চলাকালে বা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে শিক্ষক নাদির জুনাইদকে বিরত রাখা।
শিক্ষার্থীরা পরে দুপুর ১টার দিকে অধ্যাপক নাদির জুনাইদের অফিস কক্ষে তালা দেয়ার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের তালা সিলগালা করে দেন। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা বিভাগের সামনে থেকে বিক্ষোভ করে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। দশ মিনিট সেখানে অবস্থান করার পর শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন যে সেখানে উপাচার্য নেই।
এরপর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী প্রক্টরকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ৷
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘উপাচার্য আমাকে বলেছেন, অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিকেল ৪টার মধ্যে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে সেই চিঠি আমাদের কাছে চলে আসবে। তাই তোমরা এই স্থান ছেড়ে দাও।’
শিক্ষার্থীরা শুরুতে এ কথায় আশ্বস্ত না হলে অধ্যাপক মনসুর তাদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘বিকেল ৪টার মধ্যে কোনো সিদ্ধান্তের কপি আমাদের কাছে না এলে আমিও তোমাদের সঙ্গে নিয়ে এখানে অবস্থান কর্মসইচ পালন করবো।’
এই পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক মনসুরের কথায় আশ্বস্ত হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে সরে বিভাগের বারান্দায় অবস্থান নেন।
বিকেলে অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠি পড়ে শোনালে তারা বিভাগ ত্যাগ করেন।