বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত অধ্যাপক জুনাইদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

  •    
  • ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৭:১১

রোববার সকাল থেকে বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগের বারান্দায় অবস্থান করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা ‘উই ডোন্ট ফিয়ার ইউ নাদির’, নিপীড়ক মুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই’, ‘দড়ি ধরে মারো টান নাদির হবে খান খান’, ‘বাইরে শিক্ষক ভিতরে নিপীড়ক’, ‘যৌন নিপীড়ক হঠাও এমসিজে বাঁচাও’সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ‘ব্যক্তিগত আক্রোশে’ নম্বর কম দেয়ার অভিযোগের পর এবার যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী। এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার না করা পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিভাগের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

রোববার সকাল থেকে বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগের বারান্দায় অবস্থান করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা ‘উই ডোন্ট ফিয়ার ইউ নাদির’, নিপীড়ক মুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই’, ‘দড়ি ধরে মারো টান নাদির হবে খান খান’, ‘বাইরে শিক্ষক ভিতরে নিপীড়ক’, ‘যৌন নিপীড়ক হঠাও এমসিজে বাঁচাও’সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

পরে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। পরে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ গ্রহণ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, অভিযোগপত্র পেয়েছি, সাথে একটি পেনড্রাইভও পেয়েছি৷ এ ধরনের অভিযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় সে অনুসারেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এরপর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা ‘শিক্ষা নিপীড়ন একসাথে চলে না’, ‘জিরো ফিট দূরত্ব নাদিরের চরিত্র’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানান। এগুলো হলো- অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে; যৌন নিপীড়ককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনতে হবে; তদন্ত চলাকালে বা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিরত রাখতে হবে।

আজরা হুমায়রা নামে বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, সাংবাদিকতা বিভাগকে আমরা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সুরক্ষিত একটি বিভাগ হিসেবে নিশ্চিত করতে চাই। বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মানা যায় না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরব না।

এই শিক্ষার্থী বলেন, নাদির জুনাইদের নিপীড়নের বিষয়টা ডিপার্টমেন্টে ওপেন সিক্রেটের মতো। তিনি প্রত্যেকটা ব্যাচ থেকে কয়েকজন করে নারী শিক্ষার্থীকে টার্গেট করেন। আমরা এই নোংরা খেলা থেকে মুক্তি চাই।

এর আগে শনিবার বিভাগেরই এক ছাত্রী অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর সঙ্গে কল রেকর্ডসহ সহায়ক প্রমাণ যুক্ত করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

প্রক্টরের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, ‘‘অধ্যাপক নাদির জুনাইদ বিভিন্ন দ্বৈত-অর্থবোধক (ডাবল মির্নিং) কথা বলতেন। আমাকে উনার সাথে বাজে জিনিস কল্পনা করতে প্ররোচিত করতেন। বলতেন, ‘ধরে নাও তোমার সাথে বিয়ে হলে, তোমার সাথে এটা করলে ওটা করলে কেমন হতো, মনে কর, আমরা সি-বিচ গিয়েছে, সান-বাথ.......’। এ ছাড়া সারাক্ষণ যৌন আবেদনময়ী কথোপকথনে প্ররোচিত করতেন। এ সময় আমি ফ্রি থাকলেই ঘন ঘন দেখা করতে চাইতেন এবং তার বাসায় আমন্ত্রণ জানাতেন। আমি প্রতিবারই বিভিন্ন অযুহাতে নাকচ করতাম।’’

অধ্যাপক নাদির এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিতেন, যার বেশিরভাগ কথাই সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হয়ে থাকে বলে অভিযোগে জানান ওই ছাত্রী। অভিযোগকারী বলেন, উনি আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন করতেন। এড়িয়ে গেলেও আবার একই কথা রিপিট করতেন, আমাকে প্রায় জিজ্ঞেস করা হত আমার কেন কোনো অনুভূতি হয় না?

তিনি বলেন, ‘উনি (শিক্ষক) বারবার আমাকে মানসিক চাপ দিতেন, কেন কোনো অনুভূতি নাই? কেন উনাকে আমি ফিল করি না!’ওই ছাত্রী অভিযোগে বলেন, একপর্যায়ে তিনি তার বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলেন এবং স্পষ্টভাবে আমার দিকে ইঙ্গিত করেন। আমি খুব অবাক হই এবং খুব অস্বস্তিতে পড়ি। তবে আমি কৌশলে তাকে নাকচ করে দিই।

অধ্যাপক নাদির জুনাইদ কেবল তাকেই নয়, বরং আরও অনেক ছাত্রীর ‘শরীরের অবয়ব নিয়ে নোংরা’ মন্তব্য করতেন বলে অভিযোগে জানিয়েছেন ওই ছাত্রী।

সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপক বিভাগে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন মন্তব্য করে ওই ছাত্রী বলেন, আমরা নিজ বিভাগে ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠছি, নিজেদের মধ্যে সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করছি। একজন শিক্ষকের কাছে সবাই কোণঠাসা হয়ে পড়লাম! যেখানে উনি উনার মতো একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন।

এ বিভাগের আরো খবর