অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় শুক্রবার যেন পূর্ণতা পেল এই আয়োজন। মেলা শুরুর পর এই তৃতীয় ছুটির দিনটি মেলা প্রাঙ্গণ পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। বিকেল থেকে তিল ধারণের ঠাঁই ছিলো না মেলায়।
বিক্রয় প্রতিনিধিদেরও দম ফেলার ফুরসত নেই। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে গেলে ক্রেতার চাপে সেই সুযোগও হচ্ছিল না তাদের। তবে ভালো বিক্রি হওয়ার আনন্দ অভিব্যক্তি ছিল তাদের চোখে-মুখে। তারা বলছেন, গত শুক্রবারের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থী এসেছে এই শুক্রবারে।
মিজান পাবলিশার্সের বিক্রয় প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক বেশি মানুষ। গত শুক্রবার হয়নি কারণ সেটা মেলার প্রথম ছুটির দিন ছিলো। আমাদের প্রত্যাশা প্রতিটি দিনই আজকের মতো হোক। আজকে আমরা খুশি।’
কথাপ্রকাশ প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা শেখ বলেন, ‘আশা করছি, দিন শেষে গত শুক্রবারের চেয়ে আজ দ্বিগুণ বিক্রি হবে। আর গত বছরের মেলার চেয়ে একার মেলায় জনসমাগম বেশি। কারণ মেট্রো রেল হওয়াতে আগে যারা যানজটের কারণে আসার আগ্রহ পেতেন না তারাও চলে আসছেন।’
অন্বেষা প্রকাশনির বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘ক্রেতা-দর্শনার্থীর অনেক ভিড়। ভালোই বিক্রি হচ্ছে।’ এরপর তাম্রলিপি, ঐতিহ্য, আগামীসহ বেশকিছু প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও ক্রেতা-দর্শকের ভিড়ে তা সম্ভব হয়নি।
পাঞ্জেরি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মৌসুমি হওলাদার বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি মানুষ এবং বিক্রি ভালো হচ্ছে। রাতেও এতো মানুষ হবে সেটা চিন্তা করিনি।’
অন্যপ্রকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘গত শুক্রবারে মানুষ একটা প্রস্তুতির মধ্যে ছিলো। তাছাড়া মেলার এক সপ্তাহে অনেক বই-ও চলে এসেছে। তাই এখন পাঠক-ক্রেতার বেশি ভিড়। আমাদের বিক্রিও অনেক ভালো হচ্ছে।’
মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি সাজরিন আমিন বলেন, ‘মানুষ অনেক বেশি। তবে যত বেশি দর্শনার্থী সে অনুযায়ী বিক্রি ততোটা হচ্ছে না।’
শিশুপ্রহর
শুক্রবারের সকালটা বরাবরই শিশুদের জন্য। এদিন সকাল ১১টায় শুরু হওয়া শিশুপ্রহরও ছিলো ছোট্ট সোনামনিদের কলতানে মুখরিত। বিশেষ করে সবার প্রিয় সিসিমপুরের চরিত্র ইকরি, শিকুর সঙ্গে নাচ, গান, আবৃত্তিতে মেতে ওঠা শিশুদের কারণে মেলা পেয়েছে ভিন্নমাত্রা।
বাবার হাত ধরে মধ্যবাড্ডা থেকে মেলায় আসা দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়হান মুনতাছির বলল, ‘টুকটুকি, হালুম, ইকরি আমার অনেক পছন্দের। অনেক আনন্দ করেছি। অনেক ভালো লাগছে আমার।’
মুনতাছিরের বাবা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মেলা শুরুর পর থেকেই ছেলে বায়না ধরেছে টুকটুকিকে দেখতে যাবে। আজকে নিয়ে এলাম। অনেকদিন পর বাচ্চাটা একটু মন খুলে আনন্দ করলো। এমন আয়োজনের জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ।’
ধুলার অস্বস্তি
এদিকে বিপুল দর্শনার্থীর পদচারণায় ধুলাবালি মেলার পরিবেশকে কিছুটা অস্বস্তিকর করে তুলেছে। অনেককে মাস্ক পরে বা মুখে হাত দিয়ে এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে ঘুরে বই দেখতে হচ্ছে। এই নিয়ে কিছুটা বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন কিছু দর্শনার্থী।
পুরান ঢাকা থেকে আসা সালমান নাফিস বলেন, আজকে মেলায় অনেক মানুষ। তাদের হাঁটাচলার কারণে প্রচুর ধুলাবালি উড়ছে। মেলার আয়োজকদের এই বিষয়েও নজর দেওয়া উচিত। তাদের আগে থেকে জানা উচিত ছিলো, ছুটির দিনে দর্শনার্থী একটু বেশিই হবে। তাই সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও তাদের নিয়ে রাখলে মেলার পরিবেশটা আরামদায়ক হতো।
মতিঝিল থেকে আসা রায়হান আলমগীর বলেন, ‘অনেকক্ষণ মেলায় থাকার ইচ্ছে থাকলেও ধুলার কারণে দ্রুত বের হয়ে যেতে হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে আয়োজকদের অনুরোধ করবো, ধুলাবালিমুক্ত রাখার বিষয়ে যেন নজর দেয়া হয়।’
নবম দিনে এসেছে সর্বোচ্চসংখ্যক বই
শুক্রবার বইমেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। এদিন নতুন বই এসেছে ১৭১টি।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে ক-শাখায় ৩৯৫, খ-শাখায় ২৩৫ এবং গ-শাখায় ৬৫ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন অধ্যাপক নিসার হোসেন।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা
সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক-শাখায় ১২৩, খ-শাখায় ১৩৮ এবং গ-শাখায় ৫১ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন বাচিক শিল্পী আনজুমান আরা, মো. গোলাম সারোয়ার ও রফিকুল ইসলাম।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: এস. ওয়াজেদ আলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবু হেনা মোস্তফা এনাম। আলোচনায় অংশ নেন ইকতিয়ার চৌধুরী ও কুদরত-ই-হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শিশুসাহিত্যিক রিফাত নিগার শাপলা, গবেষক অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান, কবি মাশরুরা লাকী ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ার হোসেন বাদল।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা
অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সময়সূচি
শনিবার মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: সুচিত্রা মিত্র’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশ নেবেন আহমেদ শাকিল হাসমী ও অণিমা রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মফিদুল হক।