বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জাবিতে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় মাদকের কারবার, ধর্ষণের নেপথ্যেও মাদক

  • প্রতিনিধি, জাবি   
  • ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২২:০২

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগ নিয়ে মাদক কারবারিরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছেন। সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের নেপথ্যেও মাদক কারবারের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস ঘিরে সক্রিয় রয়েছে মাদকের একাধিক সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই এসব সিন্ডিকেটে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগ নিয়ে মাদক কারবারিরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছেন।

সবশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনার নেপথ্যেও মাদক কারবার-সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে।

শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ধর্ষণের ঘটনার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ মামুনুর রশিদ মামুন নামের বহিরাগত একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘মামুন প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকার জুরাইন এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে আটটি মামলা রয়েছে এবং জেলে গেছেন চারবার।’

মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে পালাক্রমে ওই ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার পরিচিত মামুনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী ছয়জনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওদিকে ধর্ষণের ওই ঘটনায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

বুধবার রাতে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৪ বছর বয়সী মামুনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। আর নওগাঁ সদর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তার সহযোগী মুরাদ হোসেনকে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মুরাদ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আমন্ত গ্রামে।

এর আগে, ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হওয়ার পরদিনই প্রধান আসামি মোস্তাফিজুর রহমানকে সাভার থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন গ্রেপ্তার হন সাব্বির হাসান, সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান। তাদেরকে ৪ ফেব্রুয়ারি তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

মামলার প্রধান আসামি মোস্তাফিজসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করার পর মামুন ও মুরাদকে গ্রেপ্তার করা হয় বুধবার রাতে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, ‘পোশাক কারখানায় চাকরি করার সময় মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়েন মামুন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার সখ্য তৈরি হয়। কারখানার চাকরি ছেড়ে ২০১৭ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন।’

ধর্ষণকাণ্ডের নেপথ্যে মাদক

ধর্ষণে অভিযুক্ত বহিরাগত মামুন মাদকের কারবার ও সেবনের জন্য প্রায়ই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতেন। সেখানে শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান তাকে আশ্রয় দিয়ে মাদকের কারবার চালাতেন।

ধর্ষণ কাণ্ডের হোতা মামুন ক্যাম্পাস ও আশপাশে প্রতিমাসে সাত হাজারের বেশি ইয়াবা সাপ্লাই দিতেন। ঘটনার দিনও ২ হাজার ইয়াবা নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন মামুন। মামুনের ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত হলের ছাত্রলীগ নেতারা। তারা ইয়াবা সাপ্লাইয়ের কাজ করতেন।

র‌্যাব জানিয়েছে, একই এলাকায় থাকার কারণে ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর সঙ্গে তিন থেকে চার বছর আগে মামুনের পরিচয় হয়। ওই তরুণীর স্বামীকে দিয়েও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশ এলাকায় মাদক সরবরাহ করতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন মামুন।

কিছুদিন আগে মামুনের থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যা হলে ওই তরুণীর স্বামীকে ফোন করে তিনি কিছুদিন তাদের বাসায় থাকতে চান। এরপর তাদের ভাড়া বাসায় প্রায় চার মাস সাবলেট থাকেন মামুন।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ‘মোস্তাফিজুর ঘটনার আগে মামুনের কাছে অনৈতিক কাজের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই হলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি এখন থেকে হলে থাকবেন।

‘মোস্তাফিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখা করতে বলেন মামুন। সে অনুযায়ী সেদিন সন্ধ্যার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে যান ভুক্তভোগীর স্বামী। মামুন সেখানে তাকে মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

‘এরপর মামনু তাকে বলেন, তিনি যেন তার স্ত্রীকে ফোন করে তার ব্যবহৃত কাপড়গুলো একটি ব্যাগে ভরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে দিয়ে যান।’

র‌্যাব বলছে, স্বামীর কথায় রাত ৯টার দিকে মামুনের ব্যবহৃত পোশাক ব্যাগে ভরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে যান ওই তরুণী। মামুন ও মোস্তাফিজ ওই ব্যাগ মেয়েটির স্বামীর হাতে দিয়ে ৩১৭ নম্বর রুমে রেখে আসতে বলেন। মেয়েটির স্বামী ওই রুমে গেলে মুরাদ তাকে আটকে রাখেন। আর মামুন ও মোস্তাফিজ মেয়েটিকে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করেন।

মঈন বলেন, ‘তারা ওই ভুক্তভোগীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলেন। পরে হলের কক্ষে ফিরে তার স্বামীকেও বাসায় চলে যেতে বলেন।’

ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত

এদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ওই ঘটনার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছে ঢাকা জেলা এলামনাই এসোসিয়েশন। সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এই মানববন্ধন অনষ্ঠিত হয়।

সংগঠনটির সভাপতি শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে ৩১৭ নম্বর কক্ষে টর্চার সেলে এক ব্যক্তিকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য ধিক্কার জানাই। পাশাপাশি বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনা যেন ক্যাম্পাসে আর না ঘটে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানাই।’

পরে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলমকে স্মারকলিপি দেয়া হয়।

এ বিভাগের আরো খবর