বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ঢাবি অধ্যাপকের আক্রোশে ফলে ধস’, লিখিত অভিযোগে শাস্তি দাবি

  •    
  • ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ। পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, ‘তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে কেন? কারণ আমি ক্লাসে ওদের অনেক কড়া কড়া কথা বলি? অন্য শিক্ষকদের মতো ঢালাওভাবে নম্বর দিই না। এ জন্য আমার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ?’

শিক্ষকের ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১২তম ব্যাচের ফলে ভয়াবহ ধস নেমেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শিক্ষার্থীরা এ জন্য অভিযুক্ত করেছেন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদকে।

তদন্ত সাপেক্ষে ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তাতে ব্যাচের ৫৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জনের স্বাক্ষর রয়েছে।

বাসভবনে গিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের হাতে বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের কাছে শিক্ষার্থীদের পাঠিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে সীতেশ চন্দ্র বাছার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি। এ ধরনের কাজ হয়ে থাকলে তা খুব দুঃখজনক। কোনো শিক্ষক এটি করতে পারেন না। বিষয়টি উপাচার্য মহোদয়ও অবগত। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি।’

কী আছে অভিযোগে

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘আমরা আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। আমাদের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের কোর্সের সমন্বয়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ। ফলে তিনি স্নাতকোত্তর পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও সমন্বিত কোর্সের (এমসিজে-৫২৭) প্রথম পরীক্ষক ছিলেন। একই সঙ্গে ওই কোর্সের ভাইভা বোর্ডেও ছিলেন তিনি।

‘ওই কোর্সটিতে মোট ৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ জনই ৪.০০ পয়েন্টের স্কেলে ৩.০০-এর নিচে পেয়েছেন। এর মধ্যে ২.৫০ পেয়েছেন ১৪ জন, ২.২৫ পেয়েছেন ১৩ জন এবং ২.০০ পেয়েছেন পাঁচজন।’

এতে বলা হয়, “স্নাতক পর্যায়ের ফলাফলে প্রথম ১০ জনের (যারা ভালো ফলের জন্য অধ্যাপক সিতারা পারভীন পুরস্কার লাভ করেছেন) মধ্যে ছয়জন স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র একজন সর্বোচ্চ ২.৭৫ পেয়েছেন। অন্যরা পেয়েছেন ২.৫০-এরও নিচে।

“সমন্বিত কোর্সে এমন ফল বিপর্যয় এর আগে কখনও দেখা যায়নি। এই ফল আমাদের সবাইকে হতবাক করেছে। স্বয়ং বিভাগের শিক্ষকরাও একে ‘নজিরবিহীন’ বলছেন।”

মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষক নাদির জুনাইদ পরীক্ষার্থীদের অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেছেন উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, ‘ভাইভাতে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে পরীক্ষার্থীদের ভীতসন্ত্রস্ত করে ফেলেন অধ্যাপক নাদির জুনাইদ। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে জানা প্রশ্নের উত্তরও ভুল হয়ে যাচ্ছিল।

‘যেমন: ব্যাচের শিক্ষার্থী শামস্ রহমানকে জিজ্ঞেস করেন, কপিল দেব ১৯৮৩ বিশ্বকাপে যার রেকর্ড ভেঙেছিলেন, সেই খেলোয়াড়ের দেশের সঙ্গে পরের বিশ্বকাপে ভারত দুটি রেকর্ড করে। রেকর্ডগুলো কী কী? আরেক শিক্ষার্থী শাফাত রহমানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: ইন্দিরা গান্ধীর সন্তান কতজন? অন্য এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করেন: কুকুরের কয়েকটি জাতের নাম বলো।’

শিক্ষার্থীদের দাবি, ‘এ ধরনের অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে তিনি (নাদির জুনাইদ) অন্য পরীক্ষকদের সামনে শিক্ষার্থীর ইম্প্রেশন (ভাবমূর্তি) খারাপ করে দেন। এরই প্রতিফলন ঘটেছে সমন্বিত কোর্সের নম্বরে।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাশফিক মিজান বলেন, “আমি ভাইভাতে ‘ইয়েস’ বলে তার (ওই শিক্ষকের) একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম। এরপর কেন তাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করিনি, এ নিয়ে অন্তত ১০ মিনিট ধরে আমাকে বকাঝকা করেন। ফলে ভাইভার শুরুতেই আমি নার্ভাস হয়ে যাই।

“সব সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর পরে তিনি আমাকে প্রশ্ন করতে শুরু করেন। তিনি আমাকে এত প্রশ্ন করতে শুরু করেন যে, অন্য একজন শিক্ষক তাকে শেষ করার অনুরোধ করেন। এরপরও অন্তত পাঁচ/সাতটি প্রশ্ন করেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে সে সময় তিনি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন যে, আমি জানা প্রশ্নের উত্তরও ভুল করছিলাম।”

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘এসব ঘটনায় স্পষ্ট যে, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের ব্যাচকে টার্গেট করে নিজে নম্বর কম দিয়েছেন। এমনকি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ভাইভার পুরো সময়জুড়ে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে আটকানোর চেষ্টা করেন। এর মধ্য দিয়ে অন্য পরীক্ষকদের প্রভাবিত করে নম্বর কমানোতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।’

‘প্রকাশের আগেই ফল নিয়ে মন্তব্য’

ফল প্রকাশের আগে তা নিয়ে কোথাও মন্তব্য করার সুযোগ না থাকলেও তা নিয়ে পরবর্তী ব্যাচের ক্লাসে অভিযুক্ত শিক্ষক মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘আমাদের জানা মতে, ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার আগে পরীক্ষা কমিটির সদস্যবৃন্দের তা নিয়ে মন্তব্য করার কোনো সুযোগ নেই। অথচ অধ্যাপক নাদির জুনাইদ পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই ১৩তম (বর্তমান স্নাতকোত্তর) ব্যাচের ক্লাসে তা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ওই ব্যাচের ক্লাসে তিনি বলেছেন, ১২ ব্যাচের রেজাল্টটা দেখবা কী অবস্থা। কয়েকজন ফেল করতে করতে পাস করে গেছে।

‘একইভাবে বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৬তম ব্যাচ) ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার আগেই তিনি ওই ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে তার ফল বলে দেন। পরে অন্য এক শিক্ষার্থীর সামনে তা নিয়ে আলোচনা করেন ওই শিক্ষার্থী।’

একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণ ‘অকল্পনীয়’ উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘একজন শিক্ষককে আমরা সততার প্রতীক হিসেবে দেখি। এ ক্ষেত্রে দেশের পথপ্রদর্শক প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছে আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ও নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি কোনো অনুরাগ বা বিরাগে প্রভাবিত না হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই প্রত্যাশিত এবং নৈতিক মূল্যবোধের দাবি। অথচ অধ্যাপক নাদির জুনাইদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভাগের শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে অনুসরণ করেন।

‘এমনকি কিছু শিক্ষার্থীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কোন পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, সেগুলোর স্ক্রিনশট সংগ্রহ করেন তিনি। এর মাধ্যমে তিনি কোন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন, তা নির্ধারণ করেন। ফেসবুকে কার্যক্রম অনুসরণ করে পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা, এমনকি তিনি হুমকিও দিয়েছেন ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের।’

লিখিত অভিযোগে উপাচার্যের কাছে তিনটি দাবি জানান শিক্ষার্থীরা, যেগুলো হলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে ভাইভা পুনর্গ্রহণ ও সম্পূর্ণ ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করা, অধ্যাপক নাদির জুনাইদের কৃতকর্মের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং শিক্ষক মূল্যায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় যে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা দ্রুত চালু করা।

অধ্যাপক নাদির জুনাইদের ভাষ্য

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কম্প্রিহেনসিভ কোর্স আমি নিই না। সারা বছর যা পড়ে, সব কোর্সের ওপরে তাদের কম্প্রিহেনসিভ পরীক্ষা নেয়া হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে একটা কোর্সে একজন শিক্ষক কীভাবে ফলাফল কমিয়ে দিতে পারে? শিক্ষার্থীরা কী এটা বোঝে? পরীক্ষার নম্বর তো একজন শিক্ষক দেন না। আর ভাইভাতেও তো একজন শিক্ষক থাকেন না।’

ওই সময় ১২তম ব্যাচের ফল প্রকাশ করার এক মাস আগেই নিচের ব্যাচগুলোকে তাদের ফল বলে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

এ অধ্যাপক বলেন, “না, এমনটা আমি করিনি। আমি প্রতি ব্যাচকেই বলি তোমাদের কিন্তু রেজাল্ট ভালো হচ্ছে না। আমি প্রতি সপ্তাহেই প্রেজেন্টেশন নিই। প্রেজেন্টেশনের দিনই সন্ধ্যায় আমি রেজাল্ট দিয়ে দিই। আমি তখন বলি, ‘দেখো, রেজাল্ট কমে গেল; কত কমে গেল। এমন হলে তো ভালো রেজাল্ট হবে না।’ আমি এটাও বলি, ‘দেখো, তোমাদের সিনিয়রদের গত বছরও এই কোর্স পড়িয়েছি। তারা নিশ্চয়ই ভুলে গেছে। তারা কিন্তু খারাপ করছে; তোমরা কিন্তু এমন কোরো না।’”

তিনি আরও বলেন, ‘আসলে তারা বানিয়ে বানিয়ে এসব কথা বলছে। আমি তো বলিনি কে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হয়েছে। এটা দুঃখজনক ও লজ্জাজনক।’

ফল প্রকাশের আগে ১৬ ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে তা জানিয়ে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন অধ্যাপক নাদির জুনাইদ।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যখন তাদের একজন শিক্ষার্থীকে আমি এটা বলেছি, তখন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে রেজাল্ট শিট আমার কাছে চলে এসেছে। যেহেতু রেজাল্ট শিট আমার কাছে ছিল, তার মানে রেজাল্ট হয়ে গেছে। তাই সিআরকে (ক্লাস প্রতিনিধি) শুধু জানিয়েছিলাম।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে কেন? কারণ, আমি ক্লাসে ওদের অনেক কড়া কড়া কথা বলি? অন্য শিক্ষকদের মতো ঢালাওভাবে নম্বর দিই না? এ জন্য আমার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ?’

এ বিভাগের আরো খবর