জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় প্রভোস্ট ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’-এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি কার্যকর করা, অছাত্রদের হল থেকে বের করে দেয়া এবং ‘নিপীড়ক’ শিক্ষক জনিকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এ সময় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক আহসান লাবিব বলেন, ‘প্রভোস্ট ও প্রক্টর ধর্ষককে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে ওই পদে দায়িত্ব পালনে নৈতিকতা হারিয়েছেন। অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ চাই।’
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, ‘এই আন্দোলন শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, সারা বাংলাদেশের আন্দোলন। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই এবং ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের। তারা যদি নিরাপদ রাখতে না পারেন তাহলে এটা তাদের ব্যর্থতা। ধর্ষণের মতো ঘটনায় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত। আপনি ক্ষমতাসীন দেখে পার পেয়ে যাবেন তা আর চলবে না।’
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আমরা এমন একজন উপাচার্যকে পেয়েছি যিনি নিষ্ক্রিয় ও নির্বিকার। ক্যাম্পাসে যত ঘটনা ঘটে এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
‘উপাচার্য বড়জোর একটা নির্দেশ পাঠান। কিন্তু এর ফল হিসেবে কিছুই ঘটে না। আমরা অছাত্রদের বের করার কথা বলেছি। তিনি শুধু নির্দেশ দিয়ে নির্বিকার হয়ে বসে আছেন। আমরা অভিযুক্তদের সার্টিফিকেট বাতিল চাই, অথচ শুধু স্থগিত করা হয়েছে।’
সমাপনী বক্তব্যে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, ‘অছাত্রদের বের করার কথা বলেছি। অথচ তিনদিন পার হয়ে গেলেও তা কার্যকর হয়নি। ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা করার কথা। তারা অভিযোগ দায়ের করেছে এখনও তা মামলা হিসেবে নেয়া হয়নি। অভিযুক্তদের সনদ স্থায়ীভাবে বাতিল হয়নি, স্থগিত হয়েছে। প্রশাসন শুধু আশ্বাস দেয়। কিন্তু বাস্তবে কিছু হয় না।’
‘প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেছে। অথচ মাহমুদুর রহমান জনির যৌন নিপীড়নের বিচার আজও হয়নি। শুধু আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের নিয়ে তদন্ত করবেন আর তারা তদন্ত করে কিছুই পাবেন না- এরকম রিপোর্ট দিলে আমরা তা মানবো না। বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনে যুক্তদের তদন্ত কমিটিতে রাখতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিব জামানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান ও অধ্যাপক এএসএম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।