সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ‘শরীফার গল্প’-এর মাধ্যমে সমকামিতা উস্কে দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেছেন, ‘এটি অবৈধ বা অগ্রহণযোগ্য প্র্যাকটিস। এটিকে উৎসাহ দেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। এটির সঙ্গে টেক্সটবুকের যে কনটেন্ট সেটারও কোনো সম্পর্ক নেই।’
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষায়িত কোনো বিষয়ে যেহেতু ধর্মীয় সংবেদনশীলতা রয়েছে সেই বিষয়টাকে কিভাবে মিটিগেট করতে পারি সেজন্য আমাদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেশ কয়েকজন ইসলামি চিন্তাবিদ। সুতরাং তারা আমাদেরকে আগে জানান যে ধর্মীয় সংবেদনশীলতার দিক থেকে কতটুকু প্রভাব সেখানে পড়তে পারে।
‘আবার বিষয়টি ওই বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ কিনা এবং শারীরিক পরিবর্তনের কনসেপ্টটি ওই শ্রেণিতে দেয়ার যোগ্য কিনা সেই আলোচনাও আছে। সেটি নিয়ে কমিটির কাছ থেকে আমরা একটা মতামত চেয়েছি। পাশাপাশি এসব বিষয়ে আমরা অন্য বিশেষজ্ঞদেরও মতামত নিচ্ছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তর্কটাকে অনেকেই উস্কে দিচ্ছে। সুতরাং আমি বলবো এর পেছনে অন্য উদ্দেশ্য আছে। আবার এই নির্বাচনের পর অপরাজনৈতিক শক্তি তিলকে তাল বানানোর অপচেষ্টায়ও লিপ্ত। তবে আমরা বলছি না সব সমালোচনা অগ্রহণযোগ্য। সমালোচনা হবে আবার আলোচনাও হবে। তবে যে বিষয়টি সেখানে নেই সে বিষয়ে উসকে দেয়ার বিষয়টি অমূলক।’
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিনা জানতে চাইলে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
‘সৃষ্টিশীলতা বা নেতৃত্বের প্রয়োজনে ডাকসু নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি সুবিধা হয়। তবে এটি হলে কতটুকু অরাজকতা বা অস্তিত্বশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেটি বিবেচনা করেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।’
এর আগে কৃতী শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান শিক্ষাক্রমকে এ পর্যায়ে আনার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বিশেষ ইনপুট রয়েছে। টেক্সটবুক বা কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষককের অংশগ্রহণ ছিলো। তবে এখন কিছু অপরাজনৈতিক দল পাঠ্যপুস্তকের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে সবার মতামত নেব।’
তিনি বলেন, ‘সংবেদনশীলতার মাত্রাটা একেক সমাজে একেক রকম। আমরা চাই না যারা অতিমাত্রায় সংবেদনশীল তারা বেশি মাত্রায় দুঃখিত হোন। আর যারা কম সংবেদনশীল শুধু তাদের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে সেটিও আমরা চাই না। দুই ক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা একটা ব্যালেন্স নিয়ে আসবো। এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা আশা করছি, যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সেই বিতর্কের সমাধান হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ আরও ২২টি মন্ত্রণালয় শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান যে বাজেট সেটি ২০০৬ সালের সরকারের মোট বাজেটের সমান।
‘সুতরাং শিক্ষায় আমাদের বিনিয়োগ বা বরাদ্দ বাড়ছে। তবে অনুরোধ করব, এই শিক্ষার বরাদ্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেন আমরা সবাই সতর্ক থাকি। এর যেন যথাযথ ব্যবহার হয়।’
অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম মাকসুদ কামালসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যগণ, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটসমূহের পরিচালক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।