বিশেষজ্ঞ সদস্য ছাড়াই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববারের এই সভায় অনুপস্থিত ছিলেন সিন্ডিকেট মনোনীত দুই বিশেষজ্ঞ সদস্য।
চার সদস্যের দু’জন অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও শুধু বিভাগের সভাপতিকে নিয়ে নিয়োগ বোর্ডের সভা করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
উপাচার্যের কার্যালয়ে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় নাটক্যলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার নাট্যকলা বিভাগের তিনটি পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ডের সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। পদাধিকারবলে আরেকজন সদস্য হলেন বিভাগের সভাপতি শাকিলা তাসনিম।
এই নিয়োগ বোর্ডে সিন্ডিকেট মনোনীত বিশেষজ্ঞ সদস্য হলেন নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ। তবে দুই সদস্যই সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে রোববার সকালে উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছেন অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া। তিনি চিঠিতে লেখেন, ‘নাট্যকলা বিভাগের তিনটি প্রভাষক (অস্থায়ী) পদের জন্য নির্বাচনি বোর্ডে নাট্যকলা বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ বা সিদ্ধান্তকে রেজিস্ট্রার অফিস কর্তৃক অগ্রাহ্য করার কারণে নাট্যকলা বিভাগের সিনিয়র মোস্ট শিক্ষক হিসেবে আমি সংক্ষুব্ধ।
‘তাছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আমি শঙ্কা অনুভব করছি। ফলে উক্ত দিনে নাট্যকলা বিভাগের নির্বাচনি বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে সভায় উপস্থিত থাকতে অপারগতা প্রকাশ করছি।’
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নাট্যকলা একটি প্রায়োগিক বিষয়। সেখানে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ছাড়া কীভাবে নিয়োগ হবে সেটা নিয়ে আমার প্রশ্ন হয়। আমরা চারজন বোর্ডের মেম্বার। সেখানে দু’জনই বোর্ডের সভায় উপস্থিত ছিলাম না।’
অপর সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এজন্য সভায় অনুপস্থিতি সম্পর্কে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, ‘ভিসি ও বিভাগের সভাপতি পদাধিকারবলে বোর্ডের মেম্বার। পদাধিকারবলে এক্সপার্টের কাজ করা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখানে বিশেষজ্ঞ সদস্য ও নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া যাননি। আরেকজন সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার সাইদও যাননি।
‘অনেকগুলো বেআইনি ও প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ তিনি (উপাচার্য) দিয়ে আসছিলেন। এটি তার ব্যতিক্রম কিছু না। তারা এ ধরনের কার্যক্রম গণহারে চালিয়ে আসছিলেন বলেই আমরা ভিসি-প্রোভিসির পদত্যাগ চাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ সভা অনুষ্ঠানের বিষয়ে বলেন, ‘কোরাম হয়েছে, তাই বোর্ড হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি শাকিলা তাসনিমও ফোন ধরেননি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে চলছে অস্থিরতা। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে চালিয়ে যাচ্ছে চবি শিক্ষক সমিতি।
এর আগে আইন ও বাংলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর উপাচার্যের কাছে যায় চবি শিক্ষক সমিতি। তাদের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের লঙ্ঘন।
ওইদিন দাবি না মানায় পরদিন থেকে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে টানা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। টানা তিন দিন অবস্থান কর্মসূচি শেষে চতুর্থ দিন প্রতীকী গণঅনশন করেন তারা। এরপর শীতকালীন ছুটি ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। ১৪ জানুয়ারি থেকে আবার লাগাতার কর্মসূচির ডাক দেয় শিক্ষক সমিতি।