কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম রিয়াজুল করিম ৪৩তম বিসিএস ডাক ক্যাডারে সারা দেশে প্রথম হয়েছেন। এর আগে তিনি ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার ও ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। রিয়াজুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায়।
বিসিএস যাত্রায় এস এম রিয়াজুল করিমের সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ গল্প। এ সফলতার গল্প জানতে রিয়াজুলের মুখোমুখি হয়েছিলেন নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি এমদাদুল হক।
নিউজবাংলা: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
এস এম রিয়াজুল করিম: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমি দুটি স্বপ্ন দেখতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া আর বিসিএস ক্যাডার হওয়া। অনার্স চতুর্থ বর্ষ থেকে আমার বিসিএসের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায়।
নিউজবাংলা: আপনার সাফল্যের পেছনে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল?
এস এম রিয়াজুল করিম: আমার অনুপ্রেরণার পেছনে ছিল আমার পরিবারের সব সদস্য। বিশেষ করে আমার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বড় ভাই শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। ওনার কাছ থেকেই আমার পড়ালেখার হাতেখড়ি। ওনার কাছ থেকেই বেসিক জিনিসগুলো স্ট্রং করেছি।
নিউজবাংলা: বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেয়া উচিত?
এস এম রিয়াজুল করিম: প্রথমত প্রিলিমিনারির জন্য অনার্সে থাকা অবস্থায় ইংরেজি ও গণিতে বেসিক স্ট্রং করতে হবে। সাধারণ জ্ঞান অংশটুকু অনার্স শেষে পড়লেও চলবে। অ্যাকাডেমিক লাইফে বিষয় অনুযায়ী দুর্বলতা শেষ করে ফেলতে পারলে প্রথম বিসিএসেই প্রিলিমিনারি পাশ করা সহজ। লিখিতর ক্ষেত্রে গণিতের জন্য মাধ্যমিকের বইগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজির লিখিত ভোকাবুলারি বেসড। ভোকাবুলারি জানা থাকলে ইংরেজিতে ভালো করা যায়। সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে এগিয়ে যাওয়া যায়।
নিউজবাংলা: ভাইভা দেয়ার পর আপনার আত্মবিশ্বাস কেমন ছিল?
এস এম রিয়াজুল করিম: ৪০তম বিসিএসের ভাইভা দেয়ার পর আমার আত্মবিশ্বাস ছিল শিক্ষা ক্যাডার পাব। ৪৩তম বিসিএস ভাইভা দেয়ার পরও আত্মবিশ্বাস ছিল যেকোনো একটি ক্যাডার আসতে পারে। ৪০তম বিসিএসের ভাইভায় ৫ থেকে ৬ মিনিট রাখা হয়েছিল। ৪১তম বিসিএসে ১০ মিনিটের মতো ছিলাম। ৪৩তম বিসিএসে ১৫ মিনিটের মতো ছিলাম। আমার ৪৩তম বিসিএসের ভাইভা ছিল অন্যগুলো থেকে ব্যতিক্রম।
নিউজবাংলা: ডাক ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
এস এম রিয়াজুল করিম: ৪০তম বিসিএস আমার জীবনের প্রথম বিসিএস ছিল। প্রথম বিসিএসেই আমি শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। পরবর্তীতে ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। বর্তমানে ৪৩তম বিসিএসে আমি ডাক ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে খুবই আনন্দিত। প্রতিটি ক্যাডারই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডাক ক্যাডারের মাধ্যমে আমি দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করতে পারব। দেশ ও মানুষের সেবার সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।
নিউজবাংলা: এ পর্যায়ে আসতে কোনো বাধা বা সংগ্রাম অতিক্রম করতে হয়েছে?
এস এম রিয়াজুল করিম: মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলাম আমি। টিউশন পড়িয়ে নিজের খরচ চালিয়েছি। অনেক সময় বাড়ি থেকে টাকা এনেছি।
নিউজবাংলা: বিসিএসের জন্য কোচিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
এস এম রিয়াজুল করিম: কোচিং বিষয়টা আপেক্ষিক। অনেকে কোচিং এ গিয়ে ইম্প্রুভ করতে পারে। কোচিং এ গিয়ে কম্পিটিশন তৈরি হলে সেটা ভালো। আবার অনেকে বাসায় বসে পড়ালেখা করেও ভালো করে।
নিউজবাংলা: বিসিএসে সফল হতে নতুনদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
এস এম রিয়াজুল করিম: যাদের বেসিক জ্ঞান ভালো তাদের একটু পরে প্রিপারেশন শুরু করলেও হয়। গণিত, ইংরেজিতে যাদের দুর্বলতা রয়েছে তাদের একটু আগে থেকেই শুরু করা উচিত। অ্যাকাডেমিক পড়ালেখা একেবারে ছেড়ে দেয়া যাবে না কারণ ভাইভাতে একাডেমিক বিষয়টা ফেইস করতে হয়।