উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। একই সময়ে শিক্ষক সমিতির কর্মসূচিকে ‘একাংশের সিদ্ধান্ত’, অন্যায় ও অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে শিক্ষকদের আরেকাংশ।
শিক্ষক সমিতির কর্মসূচির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সমিতির সভাপতিকে চিঠিও দিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের ১০৭ শিক্ষক। মানববন্ধন করা ও চিঠি দেয়া শিক্ষকদের অনেকেই প্রশাসনের বিভিন্ন পর্ষদে দায়িত্বশীল পর্যায়ে রয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুর ১১টা থেকে বঙ্গবন্ধু চত্বরে পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষক সমিতি। অপরদিকে এর প্রতিবাদে সাড়ে ১১টায় বুদ্ধিজীবী চত্বরে মানববন্ধন করে শিক্ষকদের আরেকাংশ।
শিক্ষক সমতির দাবি, তারা এখনও উপাচার্য ও উপ-উপাচারর্যের পদত্যাগের দাবিতে অটল। তাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।
চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ‘একদফা দাবিতেই আমরা অটল আছি। আগামীকালও আমাদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষকদের স্বার্থে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।’
শিক্ষকদের আরেকাংশের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষক সমিতির গৃহীত অবস্থান কর্মসূচির প্রতিবাদে মানববন্ধন করে শিক্ষকদের আরেকাংশ। মানববন্ধনে অংশ নেয়া অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্ষদে দায়িত্বশীল।
মানববন্ধনে চবির সিন্ডিকেট সদস্য ও আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির সাধারণ শিক্ষকদের মতামত নিয়ে বড় পরিসরে আন্দোলনে যেতে হয়। নির্বাহী পরিষদ তাৎক্ষণিক কর্মকাণ্ডগুলো ও রুটিন ওয়ার্কের কাজ করেন। কিন্তু কার সঙ্গে কী কথা হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে আন্দোলনে যাওয়া- এটা আমি শিক্ষক সমিতির ঐতিহ্যে দেখি না।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন যদি ৭৩-এর অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে, তাহলে এর জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় তা চ্যালেঞ্জ করা যায়। তা না করে নিজেদের মতো করে ৭৩-এর অ্যাক্টকে ব্যাখ্যা করে এটাকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে পক্ষান্তরে প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কের মুখে ফেলার শামিল।’
আইন বিভাগের শিক্ষক মুহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগকে কলুষিত করে আইন অনুযায়ী হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়াকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে শিক্ষক সমিতি।’
শিক্ষক সমিতিকে ১০৭ শিক্ষকের চিঠি
অপরদিকে শিক্ষক সমিতির অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সমিতির সভাপতিকে চিঠি দিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের ১০৭ শিক্ষক। চিঠিতে ৬০ জনের সরাসরি স্বাক্ষর রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির দায়িত্ব হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সহযোগিতা করা। উপাচার্যের বিরোধীতার নামে স্বাধীনতাবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে উস্কে দেয়া নয়; যদি ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে তার গঠনমূলক সমালোচনা করা যেতে পারে।
“সাধারণ শিক্ষকদের মতামতকে তোয়াক্কা না-করে কার্যনির্বাহী পর্ষদের একাংশের সিদ্ধান্তকে ‘শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত’ হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার এ মানসিকতা এবং অনুশীলনের আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি। পাশাপাশি, আইন বিভাগ ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে উপাচার্যের অফিস ঘেরাও করে তার সঙ্গে অশোভন আচরণেরও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি। এছাড়া, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি নিয়ে আন্দোলন করা সিদ্ধান্তের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সদস্য হিসেবে আমরা স্বাক্ষরকারীরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি।’
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, “চিঠিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন, তাদের স্বাক্ষর আমরা এখনও ভালো করে যাচাই করে দেখিনি। চিঠিতে ৪০-এর বেশি শিক্ষকের সরাসরি কোনো স্বাক্ষর নেই। ‘স্বাক্ষরিত’ টাইপ করা আছে। চিঠিতে সই করা অনেকেই প্রশাসনের বিভিন্ন পদে আছেন।”