বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দিনভর নাটকীয়তা, চবি উপাচার্য উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি শিক্ষক সমিতির

  • প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০২

চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করি নাই যে, উপাচার্য চুপিচুপি কয়েকজন প্রার্থীকে নিয়ে বাংলোতে চলে গেলেন নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার জন্য। আজকের পরিস্থিতির আলোকে একটি দাবিই উত্থাপিত হয়েছে, সেটি হলো- উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ। দাবিটি বাস্তবায়নে সোমবার বেলা ১১ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

দিনভর ‘নাটকীয়তা’ শেষে উপাচার্যের কার্যালয়ে না করতে পেরে অজ্ঞাত জায়গায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের নির্বাচনি সভা করার অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের কর্মকাণ্ডকে নজিরবিহীন ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে চবি শিক্ষক সমিতি।

রোববার দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্যের কক্ষে গিয়ে আইন ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ড (নিয়োগ বোর্ড) বাতিলের দাবিতে উপাচার্যকে চিঠি দেয় চবি শিক্ষক সমিতি।

এ সময় আলোচনার এক পর্যায়ে চবি উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির নেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে নিজের কক্ষ ছেড়ে সম্মেলন কক্ষে চলে যান উপাচার্য। সে সময় উপাচার্যের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করতে পেরে বেলা ২টার দিকে নির্বাচন বোর্ড বাতিলের দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষক সমিতির সদস্যরা।

জানা গেছে, রোববার চবি আইন বিভাগ ও সোমবার বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ডের সময় নির্ধারণ করা হয়। তবে দুই বিভাগের শিক্ষকদের অভিযোগ, পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে উপাচার্যের ‘বিশেষ ক্ষমতাবলে’ দেয়া হয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। ‘শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই’ মর্মে দুই বিভাগের পরিকল্পনা কমিটি থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হলেও তা মানা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, পরিকল্পনা কমিটির এক প্রকার আপত্তির মুখেই এই দুই বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে নির্বাচনি বোর্ড ডাকা হয়েছে। এটিকে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের লঙ্ঘন বলছেন চবি শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।

শিক্ষক সমিতির অবস্থানের মুখে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয় ত্যাগ করেন চবি উপাচার্য ও উপ উপাচার্যসহ নির্বাচনি বের্ডের সদস্যরা।

শিক্ষক সমিতির পক্ষ সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়েছে, উপাচার্যের বাসভবনে (ভিসি বাংলোতে) নির্বাচনি বোর্ডের সভা বসেছে। একইসঙ্গে এক চাকরিপ্রার্থীকে সঙ্গে নিয়েই প্রশাসনিক ভবন ত্যাগ করেছেন নির্বাচনি বোর্ডের এক সদস্য, এতে সহযোগিতা করেছে চবি প্রক্টরিয়াল টিম।

এদিন দ্বিতীয় দফায় উপাচার্যের সাক্ষাৎ পেতে ব্যর্থ হয় শিক্ষক সমিতি। শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে চবি শিক্ষক সমিতি।

এ সময় আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম আবু নোমান অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা একজন প্রার্থীকে গাড়িতে করে নিয়ে চলে যান। ফলে এই নির্বাচনি বোর্ড নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। নির্বাচনি বোর্ডের একজন সদস্য হয়ে কখনোই এ ধরনের কাজ তিনি করতে পারেন না।’

চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, ‘উপাচার্য ও তারপন্থিরা নিজে থেকে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেন, নিজে থেকে বোর্ড বসাচ্ছেন। শিক্ষকরা যখন উনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, সভাপতির সঙ্গে অনেক রূঢ় আচরণ করেছেন তিনি। পরে তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য ছয়জনকে ডেকে নেন। সেখানে আমাদের এক ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর বলেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলতে তিনি রাজি নন, তিনি নাকি অপমানিত বোধ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘যেখানে তিনি নিজে আমাদের অপমানিত করেছেন, সেখানে তিনি অপমানিত বোধ করেছেন বলে আর কোনো কথা বলেননি। যথারীতি নির্বাচনি বোর্ডের যে সদস্যরা কিছু প্রার্থীদের নিয়ে প্রক্টরের গাড়িতে করে গোপনে একটি জায়গায় গিয়ে বোর্ডের প্রক্রিয়াটি চলমান রেখেছেন বলে আমাদের কাছে খবর আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করি নাই যে, উপাচার্য চুপিচুপি কয়েকজন প্রার্থীকে নিয়ে বাংলোতে চলে গেলেন নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি দ্বিতীয়টি আর কখনো হয়নি। আমরা আগে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে তার কাছে অনেক দাবি দিয়েছি, এখন আর দাবির প্রশ্ন আসে না। আজকের পরিস্থিতির আলোকে একটি দাবিই উত্থাপিত হয়েছে, সেটি হলো- উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ। দাবিটি বাস্তবায়নে সোমবার বেলা ১১ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

এ সব বিষয়ে জানতে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রকিবা নবী ও আইন বিভাগের অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহাকে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তারা কেউ রিসিভ করেননি।

নিয়োগ বোর্ডে বসবেন না দুই সদস্য

এদিকে সোমবার অনুষ্ঠিতব্য বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সভায় না বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চার সদস্যের দুইজন।

রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে তারা বোর্ডে না বসার বিষয়টি জানান।

এই দুই সদস্য হলেন- অধ্যাপক ড. তাসলিমা বেগম এবং অধ্যাপক ড. মহীবুল আজিজ।

চিঠিতে তারা লেখেন, ‘বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে আহুত এই সভাটি সম্পর্কে ইতোমধ্যে জাতীয় পত্রপত্রিকায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে৷ এমতাবস্থায় উক্ত বিতর্কিত নিয়োগ বোর্ডে অংশগ্রহণ করা আমরা বিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করছি না।’

এ বিষয়ে বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য অধ্যাপক ড. মহীবুল আজিজ বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ নিয়মানুযায়ী হচ্ছে না; এটা অধ্যাদেশ পরিপন্থি। এখানে পরিকল্পনা কমিটিকে কোনো প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না। তাই আমরা দুজন সদস্য এই বোর্ড সভায় যাচ্ছি না।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ড চার সদস্য নিয়ে গঠিত। বোর্ডের অপর দুই সদস্য হলেন- উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার সাঈদ।

এ বিভাগের আরো খবর