বিজয়ের মাস, শীতের সকাল। ঢাকার প্রগতি সরণির কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের (সিইউবি) নিজস্ব ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ। এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের আনন্দ আর উদ্দীপনায় উজ্জীবীত ক্যাম্পাস। ইউনিভার্সিটির রুফটপে সারা দেশ থেকে আগত মেধাবী শিক্ষার্থীদের এক মিলনমেলা বসেছে যেন।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন ‘ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত মেরিট অ্যাওয়ার্ড’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সেইসঙ্গে সিইউবির পক্ষ থেকে ২০২৩ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। এক আড়ম্বর আয়োজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে সিইউবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেধাবীদের হাতে অ্যাওয়ার্ড ও ক্রেস্ট তুলে দেন সিইউবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও শিল্পোদ্যোক্তা ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও আব্দুল মোনেম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুদ্দীন মোনেম এবং আব্দুল মোনেম গ্রুপের পরিচালক ড. ফারহানা মোনেম।
বিশ্ববিদ্যালের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. গিয়াস উ আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. জিয়াউল হক মামুন, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা প্রফেসর ড. রিদওয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ এস এম সিরাজুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ এস এম জি ফারুক, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ছিলেন ব্যবসায় অনুষদের প্রধান এ এস এম আরিফুজ্জামান ও মার্কেটিং ও উপদেষ্টা সহকারী ওয়ালিদ বিন কাদের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার জন্য খুবই আনন্দের। এ স্বপ্ন আমি অনেক বছর ধরেই দেখে এসেছি। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আমার কিছু করার ইচ্ছা অনেক দিনের। আজ আমার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে বলে খুব ভালো লাগছে। আমি উপস্থিত সব শিক্ষার্থীকে অভিনন্দন জানাই।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এ শিল্পোদ্যোক্তা বলেন, ‘আপনারাই দেশের নতুন দিগন্তের আলোকচ্ছটা। ইচ্ছাশক্তি ও মেধা দিয়ে আপনারা অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন। তার জন্য প্রয়োজন নিজের ওপর আস্থা, অধ্যাবসায় ও কঠোর পরিশ্রম।’
সিইউবির অগ্রযাত্রার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বনানীর একটি বিল্ডিং থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজ ঢাকার প্রগতি সরণিতে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির নিজস্ব ক্যাম্পাস। শিগগিরই পূর্বাচলে অনেক বড় একটি ক্যাম্পাসের যাত্রা শুরু হবে। আমাদের নিজস্ব জায়গায় সেই ক্যাম্পাসে একসঙ্গে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে পারবেন। দেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন জায়গা আছে কি না- আমার জানা নেই। শুধু আমার ইচ্ছা আর স্বপ্নই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনাদের সবার সহযোগিতার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে।’
‘বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি মেধাবী, তারা অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে’ উল্লেখ করে ড. নাফিজ বলেন, ‘এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেক মেধাবী। আমরা যা জানি না, তারা তা জানে। আমার ছেলের সঙ্গে আমি দুই মিনিটের বেশি কথা বলতে পারি না। কারণ ও এত বেশি জানে যে, আমি ওর সঙ্গে কথা বলার সময় বেশি কিছু বলতে পারি না। এই ছেলেমেয়েরাই একদিন বিশ্বজয় করবে।’
সিইউবিতে বিশ্বমানের শিক্ষা পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে এ শিক্ষানুরাগী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানের। বিশ্বে উত্তর আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে এগিয়ে, আমরা সেটাই ফলো করি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কানাডার অন্টারিওতে চালু হয়েছে। তাই আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশে পড়াশোনা শেষ করে আরও সহজে উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় গিয়েও পড়তে পারবে। আমরা দেশের সব সেরা সেরা শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষা দিই।’
আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ দেশের সেরা পাঁচে থাকবে বলে এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
স্কলারশিপ নিয়ে ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘সব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর জন্য প্রতিবছরই এ স্কলারশিপ থাকবে। মেধাবীরা যেন অর্থের জন্য বিশ্বমানের পড়ালেখা থেকে পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্যই আমাদের এ উদ্যোগ।’
অনুষ্ঠানে তিনি বর্তমান প্রজন্মের প্রতি কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের দিকে বেশি মনোযোগী হতে আহ্বান জানান। পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ারও পরামর্শ দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আব্দুল মোনেম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুদ্দীন মোনেম বলেন, ‘উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিকমানের পড়ালেখা খুবই জরুরি। বর্তমান সময়টা অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক। আমি যখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি, তখন দেখেছি কীভাবে তারা সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থায় এগিয়ে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের জীবনের মিশন-ভিশন আমার খুব ভালো লাগে। তারই ধারাবাহিকতায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের উদ্যোগগুলোও চমৎকার এবং সময়োপযোগী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে নিঃস্বার্থ নেতৃত্বের মাধ্যমে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, একইভাবে আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও নিঃস্বার্থভাবে জাতির উন্নতিতে অবদান রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, একটা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র একজন ভালো শিক্ষার্থীই তৈরি করে না, দেশের জন্য একজন যোগ্য মানুষ হিসেবেও তাকে গড়ে তোলে, যার জন্য উন্নতমানের শিক্ষা ব্যবস্থার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প নেই। সেদিক থেকে সিইউবি সঠিক পথে রয়েছে।’
নিজের বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘বার্ষিক যে স্কলারশিপ চালু হলো, তার জন্য বহু গরীব-মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে নিজের ও নিজের পরিবারের পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ পাবেন। কারণ সেইসব মেধাবী শিক্ষার্থীদের শতভাগ স্কলারশিপও দেবে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি। দরিদ্রতা যেন মেধা বিকাশে অন্তরায় না হতে পারে, সেজন্যই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এ স্কলারশিপের উদ্যোগ নেয়া। আর এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই এই বিশ্ববিদ্যালয় ও নতুন এ স্কলারশিপের স্বপ্নদ্রষ্টা ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ডিন জিয়াউল হক মামুন তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজ যে শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পা রাখছে, তাকে কিন্তু আগামী বিশ-পঁচিশ বছর পরের বিশ্বকে মাথায় নিয়েই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সে জন্য যুগোপযোগী বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে নিজেকে এগিয়ে নেয়াটা জরুরি। এক্ষেত্রে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের একটি আদর্শ গন্তব্য। বিশ্বমানের পড়ালেখায় যে শিক্ষা পদ্ধতি তার সবটাই ফলো করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। তাই তো একজন শিক্ষার্থী বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ফ্যাকাল্টি-সুবিধা দেশেই পাচ্ছে।’
উদ্বোধনের দিন সাত স্কলারশিপজয়ীর হাতে সম্মাননা তুলে দেন ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, আব্দুল মোনেম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুদ্দীন মোনেম ও পরিচালক ড. ফারহানা মোনেম।
জিপিএ-৫ পাওয়া সাত স্কলারশিপজয়ী হলেন- নাজিফা রহমান মাইশা, আফরিন জাহান কলি, আফসানা আক্তার, তারেক মোহাম্মদ সাব্বির, তামিমা সুলতানা, এ বি এম আব্দুল্লাহ কাফি এবং সাইদুল মুরসালিন অলি। আগামী ২০ ডিসেম্বর চূড়ান্ত তালিকা করে বাকিদের স্কলারশিপ দেয়া হবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কৃতী শিক্ষার্থীদের জন্য শীতকালীন পিঠা উৎসবেরও আয়োজন করা হয়।
প্রসঙ্গত, মোট চারটি ক্যাটাগরিতে একশরও বেশি এই স্কলারশিপের জন্য রেজিস্ট্রেশন চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে গিয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্তরা রেজিস্ট্রেশন করে ‘ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত মেরিট অ্যাওয়ার্ড’ জিতে নিতে পারেন।
আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই রেজিস্ট্রেশন। মেধার ক্রমবিকাশে ১০০%, প্লাটিনাম শিক্ষার্থীরা ১০০%, গোল্ড ৩০% এবং সিলভার শিক্ষার্থীরা ২০% পর্যন্ত স্কলারশিপ জিতে নিতে পারেন।