কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে বিজয় দিবসের ‘বিশেষ খাবারের টোকেন’ বণ্টন নিয়ে মারামারিতে জড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। এতে উভয়পক্ষের অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
শনিবার বিকেল ৪টার দিকে হলের চতুর্থ তলায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে দুপুর দুটোর দিকে খাবারের দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় ছাত্রলীগের ওই দুই গ্রুপ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন চন্দ্র দাস চতুর্থ তলার ওয়াশরুমে গেলে পঞ্চম তলা থেকে তিন-চারজন পেছন থেকে এসে তার ওপর হামলে পড়েন। তারা হলেন- হল ছাত্রলীগের উপ-নাট্য ও বির্তক বিষয়ক সম্পাদক রবিউল আলম রিয়াজ, বিজ্ঞান অনুষদের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম আলভির ভুঁইয়া, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী জাহিদ ভুঁইয়া ও ফাইনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী শাহ আলম।
এসময় একজন তার চোখ চেপে ধরলে বাকিরা রবিনকে উপর থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করেন। বিপদে পড়ে রবিন চিৎকার শুরু করলে চতুর্থ তলার শিক্ষর্থীরা তাকে এসে উদ্ধার করেন। এসময় হামলাকারী রবিউল আলম রিয়াজ হলের পঞ্চম তলার মেজবাউল হক শান্তর রুমে আশ্রয় নেন। পরে প্রায় ৩০ মিনিটের মতো দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় ১৪তম ব্যাচের আজাহারুল ইসলাম ও রাজিব সরকার ১২তম ব্যাচের সোহাগ মিয়াকে মারধর করে নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে হল প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টরিয়াল টিমের দুইজন সদস্য এসে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুর সোয়া তিনটার দিকে পঞ্চম তলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাউল হক শান্তর রুমে হলের ১৪তম ও ১৫তম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থীদের ডেকে নেয়া হয়।
এ বিষয়ে হলের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি ওয়াশরুমে গেলে হঠাৎ করে রিয়াজ, আলভীর, জাহিদসহ কয়েকজন এসে আমাকে মারধর করে ৪ তলা থেকে ফেলে দিতে চায়। আলভীর আমার পিছন থেকে চোখ চেপে ধরে আর বাকিরা এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। পরে আমি চিৎকার শুরু করলে হলের কয়েকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে।’
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় হল ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতা, উপ-নাট্য ও বির্তক বিষয়ক সম্পাদক রবিউল আলম রিয়াজের সঙ্গে। প্রহারের শিকার রবিনকে তিনি ‘জামায়াত-শিবির ও বাম সংগঠনের এজেন্ট’ উল্লেখ করে বলেন, “এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই বিজয় দিবসের দিন তিনি খাবারের টোকেন নিয়ে ঝামেলা করেন। আমি, আলভীর ও জাহিদসহ পঞ্চম তলা থেকে নামার পথে চতুর্থ তলায় মুখ ধোয়ার জন্য থামি। এ সময় রবিন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলে তিনি আমাদের স্লেজিং করেন। পরে আমরা তাকে ‘ভাই’ বলে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলে তিনি চিল্লাচিল্লা শুরু করে দেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাউল হক শান্ত বলেন, ‘আমার রুমে ডেকে নেয়ার বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা। দুপুরের ঘটনাটি নিয়ে আমি প্রভোস্ট স্যারে সঙ্গে কথা বলতে ওই সময় ডরমিটরিতে ছিলাম। এর কিছুক্ষণ পর আওয়াজ পেয়ে স্যারসহ আমরা দ্রুত হলে আসি।’
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপাক ড. মিজানুর রহমান ঘটনার বর্ণনায় বলেন, ‘দুপুরের অব্যবস্থাপনার যে সমস্যা ছিল, তা আমি রোববারের মধ্যে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। ইমাম হোসাইন মাসুম কর্তৃক রবিন চন্দ্র দাসকে ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি আমি দেখি নাই। যদি সত্যিই ঘটে থাকে তাহলে এরও আমরা ব্যবস্থা নেব। এরমধ্যেই আরেকটি ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রশাসনকে রিপোর্ট জমা দেব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা প্রক্টোরিয়াল বডি প্রাধ্যক্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।’
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে খাবারের টোকেন বণ্টন ও সঙ্কট নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় হল ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দুটি পক্ষ। এতে সে সময় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তখন দত্ত হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মিজানুর রহমান উভয়পক্ষকে তার রুমে ডেকে নিয়ে যান। সেখানেও ইমাম হোসাইন মাসুম উদ্যত হয়ে রবিন চন্দ্র দাসকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে পড়েন এবং তাকে বিভিন্ন হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তখন রবিন চন্দ্র দাস প্রাধ্যক্ষের কাছে বিচার দাবি করলে তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।