জীবন্ত প্রজাপতি দেখছে কেউ, আবার কেউ শরীরে আঁকছে প্রজাপতির ট্যাটু, কেউ দেখছে প্রজাপতির রঙিন ছবি কেউবা রং তুলিতে আঁকছে প্রজাপতি। এভাবেই শিশুদের কোলাহলে প্রাণবন্ত ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রজাপতি মেলা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে শুক্রবার সকাল ১০টায় জহির রায়হান অডিটোরিয়ামের সামনে শুরু হওয়া এ মেলা চলে বিকেল পর্যন্ত।
মেলার উদ্ভোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলম। তিনি বলেন, ‘প্রজাপতি মেলা সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে৷ প্রজাপতি মেলায় প্রজাপতির আদলে যে সকল প্রদর্শনী হচ্ছে তা শিশুদের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। শিশুদের খুবই উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। তাদের হাস্যোজ্জ্বল অংশগ্রহণই বলে দিচ্ছে প্রজাপতি মেলার স্বার্থকতা।
এ সময় তিনি দর্শনার্থী, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারীসহ সবাইকে প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রজাপতি হলো একটি ছোট্ট নান্দনিক প্রাণী যা মানুষকে আনন্দ দেয়। দিনে দিনে এই প্রাণীটি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া যেত। এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭ প্রজাতিতে।
‘গাছপালা বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রজাপতি রক্ষা করতে হবে। কেননা প্রজাপতির পরাগায়নেই উদ্ভিদ ও গাছের সৃষ্টি। তাই মানুষের মাঝে প্রজাপতির গুরুত্ব বুঝানো এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমাদের এই মেলার আয়োজন।’
এ বছর বন্যপ্রাণী ও প্রজাপতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামকে ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জহির রায়হানকে ‘বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট-২০২৩’ এওয়ার্ড প্রদান করা হয় এবং প্রিন্ট, অনলাইন ও ব্রডকাস্ট এই তিন ক্যাটাগরিতে তিন সাংবাদিককে মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
মেলায় ছিল জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শনী, প্রজাপতির হাট দর্শন, শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আদলে তৈরি ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।
বাবার সাথে ঢাকার কল্যাণপুর থেকে মেলা দেখতে আসা নার্সারী পড়ুয়া আইমান বিনয় বলে, ‘বাবার সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছি। অনেক রঙের প্রজাপতি দেখেছি, চিত্র এঁকেছি। মেলায় এসে আমার ভাল্লাগছে।’
২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রজাপতি সংরক্ষণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়।