কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নতুন কমিটি ঘোষণা করেনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। এর মধ্যে গত ৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশে কর্মীসভাও অনুষ্ঠিত হলে কাঙ্ক্ষিত কমিটি হয়নি।
নতুন কমিটি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা আসলেও বেড়েছে নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল। শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঐচ্ছিকভাবে পালন করছে কর্মসূচিগুলো। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল কমাতে ও সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে দ্রুত কমিটি চান পদপ্রত্যাশীরা।
এ নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির পদপ্রত্যাশী রেজা-ই-এলাহী বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি হোক। নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা ফিরে আসুক। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে নতুন কমিটি ছাড়া বিকল্প নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের হাত ধরে আমাদের ক্যাম্পাসে একটি সুশৃঙ্খল কমিটি আসুক।’
বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসান রকি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটি শক্তিশালী ইউনিট কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোতে কুবি শাখা ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ক্যাম্পাসে দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় যে যার মতো চলাফেরা করছে। বর্তমান সময়ে ক্যাম্পাসে একটি সুশৃঙ্খল নেতৃত্বের অভাব অনুভূত হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সুশৃঙ্খল কমিটি দেয়া হোক, এটা আমাদের প্রাণের দাবি।’
ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হোসাইন খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকাকে টানা চতুর্থবারের মত বিজয়ী করার জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থাকবে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত। কিন্তু দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় কুবি শাখা ছাত্রলীগ বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। যার ফলে ক্যাম্পাসে তরুণ নেতৃত্বের সংকট দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কমিটি দেয়া হোক।’
শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাত সায়েম বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদকে আমরা একটি প্রাণবন্ত কর্মীসভা উপহার দিয়েছি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি উজ্জীবিত করার জন্য খুব দ্রুত একটি নতুন কমিটি গঠন প্রয়োজন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের ক্যাম্পাসের নতুন কমিটি নিয়ে খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নিবেন বলে আশা করছি।’
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসরাত জাহান জেরিন বলেন, ‘গত ৬ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে এসে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশৃঙ্খল করে তোলার চেষ্টা করেছে। গত ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হলো। সকলের প্রত্যাশা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন হবে, নতুন নেতৃত্ব আসবে। যেকোনো কারণেই সেটি হয়ে উঠেনি। আমি চাই ক্যাম্পাসে দ্রুত নতুন কমিটি আসুক।’
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। ক্যাম্পাসের প্রতিটি সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের প্রাণের দাবি একটি নতুন কমিটি আসুক। ক্যাম্পাসে নতুন কমিটির প্রায়েজন। আমরা কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ থেকে যেভাবে বলা হবে আমরা সেভাবে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ পরিচালনা করব।’
কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রজন্ম দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করেছে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতির গতি ফিরিয়ে আনতে নতুন কমিটি গঠন প্রয়োজন। কর্মীসভা করে আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলাম। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ইউনিটকে শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ একটি সুন্দর কমিটি উপহার দিবে বলে আমার বিশ্বাস।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘সঠিক সময় বলতে চাচ্ছি না। তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের তৎকালীন সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ইলিয়াস-মাজেদ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।