নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উপেক্ষা করে তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা হরতালের সমর্থনে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
জাবির ফটকে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
আরিচাগামী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মিছিল করতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তারা।
এর আগে, বেলা ১১টার দিকে জাবির ফটক থেকে জয় বাংলা গেট পর্যন্ত মিছিল করতে বের হলে পুলিশ বাধা দেয় তাদের। কিছুক্ষণ বাগবিতণ্ডা হলে পরে সেখানেই মানববন্ধন করতে বাধ্য হন তারা। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়।
মানববন্ধনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায়ের সঞ্চালনায় ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের আহ্বায়ক (একাংশ) আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘জনগণের করের টাকায় চলে এই বিশ্ববিদ্যালয়। জনগণ টাকা দেয় এই কারণে যে, এখান থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে আমলা হবে, উকিল হবে, রাজনীতিবিদ হবে। তারা পরবর্তী এই জনগণেরই সেবা করবে।
‘ঐতিহাসিকভাবে এই দেশে কখনোই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচন, ২০১৪ সাল কিংবা ২০১৮ সালের নির্বাচন কোনোটাই সুষ্ঠু হয়নি। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে এবারও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এই দেশে কখনোই স্বৈরাচার শাসক টিকতে পারেনি। স্বৈরাচার আইয়ুব খান টিকতে পারেনি, স্বৈরাচার এরশাদ টিকতে পারেনি এই ফ্যাসিস্ট সরকারও টিকতে পারবে না।’
শ্রমিক ফ্রন্ট সাভার-আশুলিয়ার সাধারণ সম্পাদক জীবন আহমেদ বলেন, ‘আমরা গতকাল দেখলাম একটা অবৈধ নির্বাচন কমিশনের অগণতান্ত্রিক তফসিল ঘোষণা। এই তফসিল ঘোষণা সম্পূর্ণ অবৈধ, অগণতান্ত্রিক। গত ২০১৮ সালের নির্বাচন এবং তার আগের নির্বাচনের মত আরেকটি নির্বাচন আমরা দেখতে পাব। এই নির্বাচন আমরা চাই না। আমরা বরাবরই বলেছি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, নির্বাচন দিতে হবে। এই সরকারের অধীনে কখনোই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।
‘সুতরাং আজকে আমরা দাঁড়িয়েছি আমার ভোটের অধিকারের জন্য। আমাদের বাঁচার জন্য। আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক। আজ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এই ঊর্ধ্বগতির সরকারের সিন্ডিকেটের পতন ঘটানোর জন্য আমাদের এই কর্মসূচি। কিন্তু পুলিশ আজ আমাদের বিক্ষোভ মিছিলের শুরুতে বাধা দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে। আমাদের থামানো যাবে না, কারণ এই আন্দোলন আমাদের বাঁচার লড়াই। আমাদের বাঁচার তাগিদেই আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘গতকাল নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দল সেটি গ্রহণ করেনি। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ তাদের বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করছে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেরুদণ্ড সোজা করে গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াতে পারছে না। তারা আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা করছে।
‘এই সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রত্যেকবারই তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বাচনে জয় লাভ করেছে। তরুণ সমাজকে টাকা দিয়ে রাতের আঁধারে চুরি করে নির্বাচন চালিয়েছে। তার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একটি একটি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে। যখনই দেশের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে যায় তখনই তারা পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনকে বানচাল করে দেয়।’