সিলেটের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া। খাসিয়া উপজাতির মানুষদের বসবাস এখানে। খাসিয়া পুঞ্জির শিশুদের শিক্ষার জন্য দীর্ঘদিন থেকে এখানে চাহিদা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী জানান, স্কুলের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েকবার গেলেও পাত্তা দেননি কেউই।
বৃহস্পতিবার খাসিয়া পুঞ্জির শিশুদের শিক্ষার এ সমস্যা সমাধানে ৪ জন বিদেশী বন্ধুর সহায়তায় নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় উদ্বোধন করেন একজন বাংলাদেশী ইউটিউবার।
ইউটিউবভিত্তিক চ্যানেল ইনফো হান্টারের (Info Hunter) প্রতিষ্ঠাতা সাকিবুর রহমান তার ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে খাসিয়াপুঞ্জির শিশুদের পড়াশোনার দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রচারের পর ওই ভিডিও দেখে শিশুদের পড়াশোনার দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসেন জার্মান, লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪ ব্যক্তি। তাদের সহায়তায় লাউয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির শিশুদের পড়াশোনার সমস্যার দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে।
বৃহস্পতিবার সকালে অতিথিদের নিয়ে স্কুলটি উদ্বোধন করা হয়। ৪০ জন শিক্ষার্থী ও দুইজন শিক্ষক নিয়ে চালু হয় এই স্কুল। শিক্ষকদের মধ্যে ১ জন খাসিয়া ভাষা ও ১ জন বাংলা ভাষায় পাঠদান করাবেন শিক্ষার্থীদের।
প্রাথমিক বিদ্যালয়টির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইনফো হান্টারের প্রতিষ্ঠাতা সাকিবুর রহমান, ব্যবসায়ী সৈয়দ ইশতিয়াক বাবেল, আসাদুর রহমান, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী, প্রচার সম্পাদক সাজু মার্ছিয়াং প্রমুখ।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের প্রচার সম্পাদক সাজু মার্ছিয়াং জানান, এলাকায় যেই বিদ্যালয়টি ছিল, তা দূরে হওয়ায় বাচ্চাদের পড়াশোনা করানো এলাকাবাসীর জন্যে কষ্টকর ছিল। তারা শিশুদেরকে একদিন স্কুলে নিয়ে গেলে বাকি ৫ দিন নিয়ে যেতে পারতেন না। স্কুল দূরে হওয়ায় ও অর্থনৈতিক সংকট থাকায় শিশুদের বিদ্যালয়ে নেয়া ছিল কঠিন।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ইনফো হান্টার চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাতা সাকিবুর রহমান ভাই আমাদের স্কুলের সমস্যা নিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এত দেশে-বিদেশে অনেকে আমাদের সমস্যা জানতে ও বুঝতে পারেন। সাকিবুর ভাইয়ের কারণে আজ আমরা স্কুলটি পেলেম। আমাদের কষ্টের অবসান ঘটলো।’
নব নির্মিত এই স্কুলের দুইজন শিক্ষক সামসুন্নাহার ও এলটি।
সামসুন্নাহার বলেন, ‘এখানে বেসরকারি স্কুলটি হওয়ার পর আমাদের নিয়োগ দিয়েছে স্থানীয় খাসিয়া পুঞ্জির নেতৃবেৃন্দরা। আমরা দুইজন শিক্ষক পাঠদান করাবো। একজন বাংলা ও একজন খাসি ভাষার ওপড় ক্লাস নেব।’
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী বলেন, ‘স্কুলের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনেকবার গিয়েছি। কেউ পাত্তা দেননি। আজ সাকিবুর ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের বাচ্চারা স্কুল পেয়েছে। উনাকে খাসিয়া পুঞ্জির সবার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে এ বিষয়ে কথা হয় ইনফো হান্টারের প্রতিষ্ঠাতা সাকিবুর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন আমার ইউটিউব ও ফেসবুক পেজে এ স্কুলের ভিডিও আপলোড দেই, তখন লাখ লাখ মানুষ তা দেখে। তাদের দীর্ঘদিনের চাহিদা ১টা প্রাথমিক স্কুলের। পরে ভাবলাম একটা স্কুলের ব্যবস্থা করে দেব। আমার ভিডিও দেখে অনেকে সাড়া দেন। এর মধ্যে ৪ জনের সহযোগীতায় আমি স্কুলের ব্যবস্থা করে দেই। তাদের দীর্ঘদিনের সমস্যার কিছুটা হলেও অবসান ঘটলো। স্কুলটা করতে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা লেগেছে। সব টাকাই বিদেশী ৪ জন বন্ধুর মাধ্যমে পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য পুঞ্জিগুলোকে এভাবে সহযোগিতা করব বলে আশা করছি। আমার মানবিক ভাইদের সহযোগিতায় এই কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করে যাব, যাতে সবার উপকার হয়।’