জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির অপর এক ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্ত্বরের সামনে বৃহস্পতিবার বিকেলের শ্লীলতাহানির এ ঘটনায় আটক মেহেদী হাসান সৈকত বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
শ্লীলতাহানির শিকার ওই ছাত্রী ছোট পর্দার অভিনেত্রীও। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত মেহেদী হাসান সৈকত জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের অনুসারী বলে জানা গেছে।
অভিযুক্তকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাহিদুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়ে ওই ছেলেকে আটক করেছিলাম। ভুক্তভোগীও থানায় এসেছিলো মামলা করতে। কিন্তু তাদের কাছে সবকিছু শোনার পর দেখলাম ঘটনাস্থল কোতোয়ালি থানার অধীনে। তাই আমরা মামলা না নিয়ে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তকে কোতোয়ালিতে পাঠিয়েছি।’
ভুক্তভোগী বলেন, ‘এই ছেলেটি অনেক দিন ধরে আমাকে জ্বালাতন করছিল। মেসেন্জারে আজে বাজে অকথ্য ভাষায় মেসেজ দিত। কিন্তু আমি পাত্তা দিতাম না। আজ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমি শান্তচত্ত্বরে সুন্দর মুহূর্তকে ধারণ করতে নিজের ভিডিও করছিলাম। এ সময় মেহেদী হাসান সৈকত নামে ওই ছেলেটি আমার পেছন থেকে স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে। এরপর আমি ভয় পেয়ে আমার পাশে থাকা ব্যাচমেট বন্ধু বিলাস দাসকে জানালে তাকেও মারধর করে সৈকত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মিডিয়ায় অভিনয়ের কাজ করি। ক্যাম্পাসে আমার ফ্যান ফলোয়াররা দাঁড়ানো ছিল। এ সময় সে আমাকে স্পর্শ করেছে। আমি শকড হয়ে গেছি। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ এমন করতে পারে না। এই ক্যাম্পাসে আমি নিরাপদ কিনা জানি না। এ ঘটনায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি এর বিচার চাই। আমি মামলা করতে থানায় যাচ্ছি।’
ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি প্রতিবাদ করায় মারধরের শিকার নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী বিলাস দাস বলেন, ‘আমার ব্যাচমেট বান্ধবী নিজের ছবি ও ভিডিও করছিল। এ সময় মেহেদী হাসান সৈকত তার স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে। এ সময় আমার বান্ধবী আমাকে ভয় পেয়ে বিষয়টি জানালে আমাকেও সৈকত নামে এক বছরের জুনিয়র ওই ছেলে আমার গায়ে হাত তোলে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
শ্লীলতাহানির অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সৈকত সহকারী প্রক্টরের সামনে বলেন, ‘আমি ওই মেয়েকে পছন্দ করি। কিন্তু সে আমার ডাকে সাড়া দেয় না।’
এরপর সৈকত ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিতেও রাজি হন। পরে সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আর কিছু বলতে চাননি।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন বলেন, ‘সে ছাত্রলীগের কেউ না। ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচিতেও সে অংশগ্রহণ করেনি। সে এমন অপকর্ম করে থাকলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমি তার শাস্তির দাবি জানাই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটায় এমন কোনো কাজ ছাত্রলীগ মেনে নেবে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সিসি ক্যামেরা দেখা হবে। অভিযোগের প্রমাণ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া ওই ছেলেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’