জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আসন্ন সিনেট শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক রাজনীতিতে নতুন করে ভাঙন সামনে এসেছে।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ ও ‘স্বজনপ্রীতির’ অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ নামে নতুন সংগঠনটি আত্নপ্রকাশ করেছে।
সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নতুন এই শিক্ষক সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’
জাবি সিনেট শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে ৩৩ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’। যা ভেঙেই নতুন এ সংগঠনটির সৃষ্টি।
নতুন এ সংগঠনের আহ্বায়ক হয়েছেন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) অধ্যাপক মোতাহার হোসেন ও সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী।
এছাড়াও কমিটিতে আছেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, আইবিএ-জেইউ এর অধ্যাপক আইরিন আক্তার এবং একই ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মালিহা নার্গিস আহমেদ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীমা নাসরীন জলি, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন এবং জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম।
সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর কতিপয় সুবিধাবাদী শিক্ষকের ইন্ধনে আওয়ামীপন্থি জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের না নিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গত বছরের ১১ অক্টোবর বিতর্কিতদের দিয়ে সংগঠনটির নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। এতে তিনি নিজের ব্যক্তি ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে সংগঠনটিকে ব্যবহার করতে চরম স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই উপাচার্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের আহবায়ক কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি দেখান ও বিতর্কিতদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগে বিতর্কের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, গত এক বছরে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে উপাচার্য ভীষণভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ও বাইরে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
এছাড়া উপাচার্যের পেশাদারিত্ব নিয়ে বলা হয়, সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে তিনি সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতির নির্বাচনী বোর্ডে যোগ্য ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে একাডেমিক ইথিকস ও পেশাদারিত্বের অভাব দেখিয়েছেন।
উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এ ধরণের বক্তব্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, উপাচার্য পদ ও সরকারের জন্য ভীষণ অসম্মানজনক ও বিব্রতকর।
আমরা বিশ্বাস করতে চাইনা যে, এ অভিযোগ সত্য। তবে উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাবের যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য আমরা রাষ্ট্রের যথাযথ কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
এতে আরও বলা হয়, যাদেরকে কখনো জাতীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি তারাই তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য উপাচার্যকে ক্রীড়নকে পরিণত করেছে। সর্বোপরি বিশেষ সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ও উপাচার্যের এসকল বিতর্কিত কর্মকান্ড জাতীয় অঙ্গনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।
এ বিষয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’র আহ্বায়ক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা বিজ্ঞপ্তিতে সকল কারণ উল্লেখ করেছি।’
‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের’ আহ্বায়ক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতির যে অভিযোগ তারা করছে আমি তাদের শুধু বলতে চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কি কোন নিজস্ব অস্তিত্ব নাই? আমি কি শুধুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের ভাই হিসেবে পরিচিত?
‘আমি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলাম, সিনেট প্যানেলে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছি, গত শিক্ষক সমিতির সদস্যপদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছি। তাহলে আমার পরিচয় কি শুধুই উপাচার্যের ভাই হিসেবে না আমার অন্য কোন পরিচয় আছে? নতুন সংগঠনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি যেহেতু সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে একজন প্রার্থী। তাই নিবাচন প্রাক্কালে নতুন এ সংগঠন নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।’
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্যকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালে আওয়ামীপন্থীরা ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ নামে সংগঠন গঠন হয়েছিলো।