কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মেডিক্যাল সেন্টার ভাঙচুর ও নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের ঘটনায় তিনজন ছাত্রকে স্থায়ী এবং বাকি তিনজন ছাত্রকে এক বছর করে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উপাচার্যের কার্যালয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া তিন ছাত্র হলেন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মিজানুর ইমন ও শুভ এবং আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রেজোয়ান সিদ্দিকী কাব্য।
আর এক বছর করে বহিষ্কার করা হয়েছে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ২০২১-২২ বর্ষের আকিব, সাকিব ও পুলককে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরীন, আইন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনিচুর রহমান সহ ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা।
সভা শেষে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ।
তিনি জানান, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিন ওসমানকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে মিজানুর ইমন ও শুভর অধিকতর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বলে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার এবং বাকি তিনজন আকিব, পুলক ও সাকিবের সংশ্লিষ্টতা কম থাকায় তাদের এক বছর করে বহিষ্কার করা হয়।
তিনি আরও জানান, এ ছাড়া গত ১০ জুলাই মেডিক্যাল ভাঙচুরের ঘটনায় আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রেজোয়ান সিদ্দিক কাব্যের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার সঙ্গে থাকা অন্য দুই শিক্ষার্থী সালমান আজিজ, আতিক আরমান কাব্যের সঙ্গে থাকলেও সরাসরি সংশ্লিষ্ট না থাকায় তাদের সতর্ক করা হয়েছে, তবে সর্বক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন।
এ বিষয়ে ইবির ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরীন বলেন, ‘অভিযোগগুলো প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তাদের এ শাস্তি দেয়া হয়েছে।’
ইবির উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া পরিবেশ থাকবে এবং শিক্ষার্থীরা সহাবস্থানে একে অপরের সহযোগিতা করবেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা শিক্ষাবান্ধব এবং র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি।’
র্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থী তাহমিন ওসমান বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রশাসন সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। তারা এগ্রেসিভভাবে আমাকে র্যাগ দিয়েছিল। তাই আমি মনে করি, সঠিক সিদ্ধান্তই হয়েছে। আমি চেয়েছিলাম আমার সাথে যা হয়েছে, আর কেউ যেন এর শিকার না হয়, তাই আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। এই সময়টাতে পরিবার আমার পাশে ছিল।’
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর র্যাগিং ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ দেয় ওই শিক্ষার্থী। ঘটনা তদন্তে ১০ সেপ্টেম্বর ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির আহ্বায়ক ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডীন প্রফেসর সাইফুল ইসলাম।